প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর যখন সারাবিশ্ব ঝুরে মন্দার বাজার চলছে, সেই সময় ১৯৩০ সালের ৩০সে আগস্ট Nebraska, Omaha, USA তে একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন Warren Buffett.
তার বাবা Howard Buffet এর চাকরি চলে যাওয়ার পর তাদের আর্থিক অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়৷ এরপর তার বাবা একটি দোকানে কাজ করতে শুরু করেন৷
ছোটবেলায় অন্য ছেলেরা যখন খেলনা নিয়ে খেলতে ভালবাসতো Warren Buffett তখন অংকের সংখ্যা নিয়ে খেলতে ভালবাসতো৷ মাএ ৭বছর বয়সে তিনি Omaha পাবলিক লাইব্রেরি থেকে One thousand ways to make 1000 doller নামকে একটি বই ভাড়া করে নিয়ে এসে পড়তে শুরু করেন৷ এই বইটিতে হাজার ডলার রোজগার করার হাজারটি উপায় বলা ছিল৷
এই বইটি পড়ে ছোট Warren বিজনেসের প্রতি ঝুকে পরে৷ তিনি তার দাদুর দোকানের সামনে অনেক কোল্ড ড্রিংক এর ডাকনা পরে থাকতে দেখে, সেগুলো একজায়গায় করেন৷ তারপর সেগুলো গুনে দেখেন যে কোন কোম্পানির কোল্ড ড্রিংক সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে৷
তিনি তখন দেখতে পান যে Coca cola কোম্পানির ড্রিংক সবথেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে৷
তখন তিনি তার দাদুর দোকান থেকে প্রতি বোতল Coca cola 25 সেন্ট দাম দিয়ে কিনে নিয়ে সেগুলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৩০ সেন্ট প্রতি বোতল বিক্রি করতে শুরু করেন৷ একই সাথে তিনি চুইংগাম এবং খবরের কাগজ বিলি করতে শুরু করেন৷
এভাবে তিনি বেশ কিছু টাকা জমিয়ে ফেলেন এবং ১১ বছর বয়সে তিনি তার নিজের এবং বোনের জমানো টাকা দিয়ে পার্টনারশিপে ৩৮ ডলার দিয়ে City service এর ৩টি স্টক কিনেন কিন্তু কেনার পর থেকেই স্টক টির দাম পড়তে শুরু করেন এবং তা ২৯ ডলারে নেমে যায়৷
এইসময় তার বোন তাকে রোজ কথা শুনাতে করে দেয় আর বলে তাদের সব টাকা নষ্ট হয়ে গেল৷ কিছুদিন পর যখন স্টক টির দাম বাড়তে শুরু করে এবং ৪০ ডলারে এসে পরে তখন Warren দেরি না করে তখনি স্টক টি বিক্রি করে দেন৷ এর কিছু দিন পরেই এই স্টক টির দাম বেড়ে দারায় ২০০ ডলার এর মতো৷
স্টক মার্কেটে এটা ছিল তার জীবনে করা প্রথম ভুল৷ এরপর তিনি ছোটখাটো ব্যবসা করে যেমন, স্টাম্প বিক্রি করা, ব্যবহারিত গলফ বল বিক্রি করা এবং সাথে পিন বল মেশিনের একটা ছোট ব্যবসা করে মাএ ১৬ বছর বয়সে বর্তমানের প্রায় ৫৩ হাজারের সমমূল্য অর্থ জমিয়ে ফেলেছিল৷
তাই তিনি চেয়েছিলেন হাই স্কুল শেষ করেই পুরোপুরি ব্যবসায় ডুকে যেতে কিন্তু তার বাবা তাকে কলেজ থেকে ডিগ্রি অর্জন করার পরামর্শ দেন৷ তার বাবার কথা অনুযায়ী সে University of Nebraska থেকে ডিগ্রি অর্জন করেন৷
এরপর তিনি মাস্টার্স শেষ করার জন্য Harvard business school এ এডমিশন এর জন্য আবেদন করেন, কিন্তু সেখান থেকে তার এপ্লিকেশনে বাতিল করে দেয়৷ যেটাকে এখন Harvard business school এর ঐতিহাসিক বড় সিদ্ধান্ত হিসেবে গন্য করা হয়৷
এরকম সময় Warren Buffett জানতে পারেন যে তিনি যাকে তার নিজের আইডল বলে মনে করেন, সেই Benjamin Graham যাকে Father of value investing বলা হয়, তিনি তখন Columbia Business school এ পড়াচ্ছিলেন৷ তাই তিনি ব্যবসায় Investing শেখার জন্য Columbia business school এ এডমিশন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷
সেখানে পড়া শেষে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে তার আইডল Benjamin Graham এর সাথে কাজ করার জন্য তাকে অফার দেন৷ কিন্তু একজন ইহুদি হবার কারনে Benjamin Graham তাকে কাজে নেন না৷ ঠিক এর এক বছর পর Warren এর কাজের পারদর্শিতার পরিচয় পেয়ে Benjamin Graham নিজে গিয়ে তাকে বছরে ১২ হাজার ডলার বেতন অফার করে তার সাথে কাজ করতে চান৷
এখান থেকে তিনি Benjamin Graham এর সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে স্টক মার্কেটের একজন এক্সপার্ট হয়ে উঠেন৷ তিনি এখনো তার সাফল্যের ৮৫% কৃতিত্ব Benjamin Graham এবং তার লেখা বই The intelligent investor কে দেন৷
কিছু বছর পর যখন Benjamin Graham Retirement করে যান তখন Warren নিজের একটি কোম্পানি শুরু করেন এবং Benjamin Graham এর শেখানো Value কে কাজে লাগিয়ে তিনি স্টক মার্কেটে Invest করতে শুরু করেন৷
১৯৬২ সালে তিনি Mr. Stantons কোম্পানির স্টক কমতে দেখে তিনি এই কোম্পানির স্টক কিনতে শুরু করেন৷ এর কিছু দিন পর Mr. Stanton এর সাথে মৌখিক ভাবে কথা হয়ে চুক্তি করে যে, Mr. Stanton Warren Buffett এর কাছ থেকে তার স্টক গুলো ১১.৫০ ডলার পার শেয়ার হিসেবে কিনে নিবেন কিন্তু পরে যখন Warren এর কাছে লিখিত টেন্ডার চলে আসে তখন সেখানে Mr. Stanton ১১.৫০ ডলার প্রতি শেয়ারের বদলে ১১.৩৭ ডলার প্রতি শেয়ার হিসেবে পাঠান৷
Mr. Stanton এই চিটিংবাজ কাজ দেখে Warren Buffett রেগে যান এবং তিনি স্টক বিক্রি করার বদলে উল্টো আরো বেশি করে Mr. Stanton এর কোম্পানির স্টক গুলো কিনতে শুরু করেন এবং আস্তে আস্তে পুরো কোম্পানি নিজের হাতে নিয়ে আসে৷ এবং তিনি ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে Mr. Stanton কে কোম্পানি থেকে বের করে দেন৷
রাগের বসভর্তি হয়ে এই সময় Warren Buffett তার জীবনের সবথেকে বড় ভুল Investment টি করেছিলেন৷
এরপর একবছর অনেক চেষ্টা করার পরও তিনি কোম্পানি মূল যে গার্মেন্টস এর ব্যবসাটা ছিল সেটাকে কোনভাবেই লাভের দিলে নিয়ে যেতে পারলেন না৷
কিন্তু তিনি হার মেনে নেননি৷ তিনি তখন Berkshire Hathaway কোম্পানির বিভিন্ন মেশিন, ফ্যাক্টরি এগুলো বিক্রি করে, সেই টাকা গুলো বিভিন্ন ইনসুরেন্স কোম্পানিতে Invest করতে শুরু করেন৷ এবং কোম্পানির মূল গার্মেন্টস এর ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলেও আস্তে আস্তে Investment কোম্পানির রুপে তিনি কোম্পানি টিকে লাভের দিকে নিয়ে আসেন৷
২০১০ সালে Warren Buffett বলেন, যদি আমি তখন ইমোশনাল না হয়ে Berkshire Hathaway কোম্পানির শেয়ার না কিনে ডাইরেক্ট ইনসুরেন্স কোম্পানি গুলোতে invest করতাম, তাহলে আজ আমি আরো ২০০ বিলিয়ন ডলার বেশি রোজগার করতে পারতাম৷
তাই ইমোশনাল হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া টাকে তিনি তার জীবনের সবথেকে বড় ভুল সিদ্ধান্ত মনে করেন৷
তার এই ভুল সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা নিয়ে তারপর থেকে তিনি যেই কোম্পানির গোড়া থেকে জানেন শুধু সেই কোম্পানিতে Invest করতে থাকেন৷
যেমন ছোটবেলায় তিনি নিজে Washington এর খবরের কাগজ বিলি করতেন এবং কোকা কোলার ক্যান তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজে বিক্রি করতেন আর তাই তিনি জানতেন এই প্রোডাক্ট গুলোর Quality, customer satisfaction এবং customer loyalty এর ব্যাপারে তাই তিনি বড় অংকের টাকা এই দুইটি কোম্পানিতে Invest করেন এবং যা তাকে অনেক পরিমানে লাভ এনে দেয়৷
Warren Buffett বর্তমানে যত টাকার মালিক তার ৯০% এর বেশি টাকা তিনি তার ৫০ বছর বয়সের পর এসে রোজগার করেছেন৷
৮৯ বছর বয়সে এসেও এখনো তিনি একজন বাচ্চার ডায়েট অনুসরণ করেন৷ তার সারাদিনের প্রধান দুটো খাবার, কোকা কোলা আর আইসক্রিম৷
তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে তিনি এরকম একটা অস্বাস্থ্যকর ডায়েটে কেন চলেন তখন তিনি বলেন, আমি Death rate table টা খুজে দেখি যে ৬বছর বাচ্চাদের মৃত্যুর হার সর্বনিম্ন তাই আমি একটা ৬বছরের বাচ্চার ডায়েট অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷
একজন বিলিয়নিয়ার এর নাম শুনতেই আমাদের মাথায় আসে, বড় বড় বাড়ি, দামি দামি গাড়ি আরো কতকিছু কিন্তু Warren Buffett ১৯৫৮ সালে ৩১ হাজার ৫০০ ডলার দিয়ে ৫টা বেডরুমের একটা সাধারণ বাড়ি কিনেন Ohama তে এবং আজো তিনি তার সেই বাড়িতে থাকেন৷
তার এই কাজগুলোর জন্য মানুষ এতটাই পাগল যে মানুষ তার সাথে লাঞ্চ করার জন্য মিলিয়ন ডলার খরচ করতেও রাজি৷
২০১২ এবং ২০১৬ সালে তিনি এরকম দুইটা লাঞ্চের আয়োজন করেন এবং সেখান থেকে রোজগার হওয়া ২০মিলিয়ন ডলার তিনি পুরোটাই চ্যারিটিতে দান করে দেন৷
২০১৩ সালে স্টক মার্কেট যখন অনেক উপর পর্যন্ত উঠেছিল তখন তিনি একদিনে ২৯০ কোটি টাকাও রোজগার করেছেন৷
তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তার এই কাজগুলোর গোপন জিনিস টা কী তখন তিনি জানান, আমি আমার রোজ ৮০% সময় কোন না কোন বই অথবা খবরের কাগজ পরে কাটাই৷
বিশ্বের ৩য় ধনী ব্যাক্তি হবার পরেও এখনো Warren Buffett কোন স্মার্টফোনের বদলে পুরনো নকিয়ার ফ্লিপ ফোন ব্যবহার করেন৷
যেই জিনিসগুলো আপনার দরকার নেই সেই জিনিস গুলো যদি আপনি কিনতে শুরু করেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি এমন একটা সময় আসবে যখন যেই জিনিস গুলো আপনার দরকার সেই জিনিস গুলো আপনাকে বিক্রি করতে শুরু হবে৷
কথাটা শেয়ার মার্কেটের জাদুকর Warren Buffett এর বলা৷
সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা চ্যারিটি তে দান করে দেওয়ার পরেও আর বর্তমানে বিশ্বের ৩য় ধনী ব্যাক্তি থাকা সর্তে ও, এই মানুষটি ৮৯ বছর বয়সে আজো প্রতিদিন তার ৫০বছরের পুরনো অফিসে গিয়ে, তার ৫০ বছরের পুরনো ডেস্কে বসে কাজ করেন৷
মাএ ১১ বছর বয়সে নিজের বোনের সাথে পার্টনার শীপে ২৬০০ টাকায় ৩টি শেয়ার কিনে যে ছেলেটি শেয়ার মার্কেটে পা রেখেছিল, আজ সে সাড়ে ৫ লক্ষ কোটি টাকার মালিক৷
এই ছোট ছোট পার্থক্য গুলোই Warren Buffett কে Investment এর জাদুকর বানায় আর একজন সাধারণ মানুষকে সারাজীবনের জন্য সাধারণ মানুষ৷
Thanks to comment Jibon Somossa official blog. Stay with us for more content. Follow us to Facebook. www.facebook.com/jibonsomossa.blog