জেনে নিন কিভাবে খাদ্যতালিকায় হলুদের ব্যবহার করবেন৷
১) খাদ্য তালিকায় থাকা বিভিন্ন ভাজা শাক সবজি গুলোতে রান্নার সময় এক চিমটে হলুদ দিন। এতে একটি সুস্বাদু খাবার যেমন তৈরি হবে, তেমনি এটি পুষ্টিকর হবে। আলুভাজা কিংবা ফুলকপি দিয়ে কোন খাবার তৈরি করার সময় এতে অল্প পরিমাণে হলুদ দিয়ে দিন। এটি দেখতেও সুন্দর হবে এবং খাবার দিক দিয়েও পুষ্টিগত হবে।
২) আপনাদের খাদ্যে থাকা সালাদ খাওয়ার সময় সালাদের উপর কিছু পরিমান হলুদের গুড়ো ছিটিয়ে দিন তাতে খাবার পুষ্টি বাড়বে এবং সাথে গুণগত মানও বেড়ে যাবে৷
৩) রোজ রাতে ডিনারে স্যুপ খাচ্ছেন ওজন কমানোর জন্য? তাহলে তো খুবই ভালো। সুপের মধ্যেই নিয়ে নিন এক চিমটে হলুদ। এটা স্যুপকে আরো বেশি স্বাস্থ্যকর করে তুলবে।
আরো পড়ুনঃ- ত্বকের যত্নে হলুদের উপকারিতা
৪) সকালে কিংবা সন্ধ্যেতে হলুদ দিয়ে যে কোন ধরনের জুস তৈরি করে খেতে পারেন। এটি ত্বককে এবং ভেতর থেকে শরীরকে সুস্থ রাখবে।
৫) এছাড়াও হলুদ চা তৈরি করে খেতে পারেন।
৬) নারকেলের দুধের সাথে হলুদ ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে তার মধ্যে অল্প মধু দিয়ে একটি সুস্বাদু পানীয় তৈরি করে খেতে পারেন।
৭) এছাড়া যদি আপনি কাঁচা হলুদ খেতে পারেন তা তো খুবই ভালো স্বাস্থ্যের জন্য। তবে যদি কাঁচা হলুদ সরাসরি খেতে না পারেন সেখানে যে কোন খাবার প্রস্তুতির সময় তার মধ্যে এক চিমটে হলুদ দিয়ে দিন। এটি আপনার শরীরে সমানভাবে কার্যকরী হবে।
৮) এছাড়াও আমাদের চারপাশে বিভিন্ন প্রসাধনী, টুথপেস্ট, সাবান রয়েছে যেগুলো হলুদ দিয়ে তৈরি হয়। ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সেগুলো ব্যবহার করতেই পারেন।
৯) তবে অবশ্যই সেগুলোর কার্যকরীতা দেখে। কেননা কোনও একটি প্রসাধনী দ্রব্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার কার্যকারিতা যতটা না হবে এর থেকে ঘরোয়া উপায়ে হলুদ যদি ব্যবহার করা যায় সেটা আরও ভাল প্রভাব ফেলবে।
হলুদের অপকারিতা –
আমরা একথা সকলেই জানি কোনও জিনিসই অতিরিক্ত ব্যবহার করা ঠিক নয়। সে ক্ষেত্রে হলুদ এর বিকল্প নয়। একনাগাড়ে যদি অত্যধিক পরিমাণে হলুদ ব্যবহার করা হতে থাকে সে ক্ষেত্রে কিন্তু কিছু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। জেনে নিন অত্যধিক হলুদ ব্যবহারের ফলে আপনার শরীরে কি কি সমস্যা হতে পারে?
আরো পড়ুনঃ- শাকসবজি ও ফলমূল দিয়ে রুপচর্চ
১) গর্ভাবস্থায় কিংবা প্রসূতিকালীন অবস্থায় সমস্যা :
গর্ভাবস্থায় কিংবা স্তন্যদানের সময় অত্যধিক হলুদ খাওয়ার ফলে যে কোনো গুরুতর সমস্যা হতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া না গেলেও এই সময় খাবারে স্বল্প পরিমাণে হলুদ খাওয়াই নিরাপদ। কেন না এর অত্যধিক গ্রহণের ফলে গর্ভস্থ সন্তানের সমস্যা হতেই পারে। তাই হলুদের পরিমাণ বাড়ানোর আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং খাবারে কি পরিমাণ হলুদ গ্রহণ করবেন সেটি অবশ্যই তার থেকে পরামর্শ করে জেনে নিন।
২) কিডনির পাথর বাড়িয়ে তুলতে পারে :
অনেকবেশি হলুদ ব্যবহারের ফলে আমাদের কিডনির ভিতর সমস্যা হতে পারে৷ হলুদের ভিতর অক্সলেট থাকে ২% এবং যার ফলে খুব বেশি হলুদ খাবারে ব্যবহার করলে কিডনির ভিতর পাথরের মতো সমস্যা হতে পারে, এমনকি কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে৷ এরজন্য খুব বেশি হলুদ ব্যবহার বন্ধ করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী হলুদ গ্রহণ করুন৷
৩) শরীরে লোহার অভাব :
অত্যধিক হলুদ ব্যবহার করার ফলে শরীরে লৌহের ঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে। কেননা হলুদ আয়রন শোষণ রোধ করতে পারে, যার ফলে আয়রনের ঘাটতি দেখা যেতে পারে। তবে যে সমস্ত ব্যক্তিদের শরীরে লৌহের ঘাটতি রয়েছে তারা অবশ্যই উচ্চ মাত্রায় হলুদ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। এক্ষেত্রে উপকারের বদলে অপকার হতে পারে।
৪) রক্তপাতের সমস্যা :
অতিরিক্ত হলুদ শরীরের রক্তকে তরল করে দেয় আর এটি একদিক যেমন ভাল ঠিক তেমনি আবার খারাপ৷ যদি হঠাৎ করে কারো সার্জারি বা রক্ত ক্ষরন হয় তাহলে সেক্ষেত্রে হলুদ থেকে বিরত থাকতে হবে৷ কারণ হলুদ রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না। যার ফলে কোন যদি রক্তক্ষরণজনিত ব্যাধি হয় সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও কোনরকম অপারেশন হলে সে ক্ষেত্রে তার দু তিন সপ্তাহের মধ্যে হলুদ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
৫) অ্যালার্জির সম্ভাবনা :
অতিরিক্ত হলুদ খেলে এলার্জি সমস্যা দেখা যেতে পারে। হয়তো তরকারিতে হলুদ খেলে সেটা বোঝা যাবে না কিন্তু যদি কাঁচা হলুদ খাওয়া শুরু করেন সেক্ষেত্রে অনেকের ক্ষেত্রে ত্বকে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয় অর্থাৎ শরীর তা নিতে পারেনা। হলুদ খাওয়া শুরু করার পরে যদি এইরকম কোন সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সাথে সাথেই হলুদ খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে৷
৬) পেট খারাপ বা ডায়রিয়া :
আমরা অনেকেই দেখি হঠাৎ করে কোন জিনিসের গুনাগুন দেখে তা চট করে শুরু করে দিই। তেমনই শরীরকে সুস্থ রাখতে অনেককেই হলুদ গুঁড়ো কিংবা কাঁচা হলুদ খেতে দেখা যায়। তবে তা অত্যধিক পরিমাণে খেয়ে ফেললে কিন্তু শরীরের জন্য খারাপ। সে ক্ষেত্রে পেট খারাপ, ডায়রিয়া কিংবা বমির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই সমস্ত কোন সমস্যা থেকে থাকলে হলুদ খুব বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা চলবে না। পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ- হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়
ইতিমধ্যেই আমরা এই নিবন্ধটি থেকে হলুদের বিভিন্ন গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে নিয়েছি। এর পাশাপাশি অত্যধিক হলুদ গ্রহণের ফলে কিরূপ সমস্যা হতে পারে তার সম্পর্কেও জেনেছি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় হলুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। এর পাশাপাশি ত্বক পরিচর্যায়ও হলুদের ব্যবহার অনস্বীকার্য।
সুতরাং আজ থেকেই রান্নাঘরের এই পরিচিত মসলা টিকে আপনার খাদ্যতালিকায় এবং রুপচর্চায় শামিল করুন। যাতে আপনি আরো স্বাস্থ্যকর এবং সুন্দর থাকতে পারেন। এর পাশাপাশি আরো নতুন নতুন আপডেট পেতে আমাদের পেজে চোখ রাখুন এবং অবশ্যই আপনি দৈনিক খাদ্যতালিকায় কত পরিমাণ হলুদ খাদ্য তালিকাশ রাখছেন সেটা আমাদের জানাতে ভুলবেন না।
Thanks to comment Jibon Somossa official blog. Stay with us for more content. Follow us to Facebook. www.facebook.com/jibonsomossa.blog