Shiv Khera এর International best selling বই "You Can Win" থেকে শেয়ার করবো, "লক্ষ্য নির্ধারণ করে কিভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাবেন"
জ্ঞান আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে, সেই জন্যই আপনার জানা দরকার; লক্ষ্য কি?
প্রাচীন কালে একজন ভারতীয় ঋষি তার শিষ্যদের ধনুর্বিদ্যা শেখাচ্ছিলেন : একটি কাঠের পাখি গাছে রেখে ছাত্রদের বললেন- “পাখিটির চোখে লক্ষ্য স্থির করাে” তারপর প্রথম শিষ্যকে সে কী দেখছে তা বর্ণনা করতে বললেন৷ শিষ্য বলল, “আমি দেখছি গাছ, গাছের ডাল - পালা, আকাশ পাখি এবং তার চোখ”। ঋষি তাকে অপেক্ষা করতে বললেন৷ তারপর দ্বিতীয় শিষ্যকে একই প্রশ্ন করতে সে বলল, “আমি কেবল পাখির চোখ দেখছি”৷ ঋষি বললেন, “খুব ভালাে, তাহলে চক্ষু বিদ্ধ করাে” তীর সােজা গিয়ে পাখিটির চোখ বিদ্ধ করলাে৷
এই গল্পটির নীতি শিক্ষা কী? আমরা যথাযথ ভাবে লক্ষ্য স্থির করে দৃষ্টি নিবদ্ধ না করলে সিদ্ধি লাভ করতে পারি না৷ লক্ষ্য স্থির করে মনঃসংযোেগ করা কঠিন; কিন্তু এই দক্ষতা আমরা অনুশীলনের দ্বারা অর্জন করতে পারি৷ জীবনের পথে অগ্রসর হতে হলে লক্ষ্যে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখুন৷ সু - অভ্যাসের ওপর লক্ষ্য রাখুন, বদ - অভ্যাসর ওপর নয়৷
আরো পড়ুনঃ- জীবনে ব্যর্থতার ৩০ টি কারণ
লক্ষ্যের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করুনঃ-
১৯৫২ সালে ৪ ঠা জুলাই ফ্লোরেন্স চ্যাডউইক ও মহিলা সাতারু হিসাবে ক্যাটেলিনা প্রণালী পার হতে যাচ্ছিলেন৷ তার আগে তিনি ইংলিশ চ্যানেল জয় করে ছিলেন৷ সারা বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল তার দিকে৷ চ্যাডউইক ঘন কুয়াশা, হাড় কাঁপানাে ঠান্ডা এবং অনেক সময় হাওরের উৎপাতের সঙ্গে লড়াই করলেন৷
তীরে পৌছাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলেন৷ কিন্তু চোখের জলচশমার মধ্য দিয়ে যখনই দেখছেন, তখনই সামনে দেখছিলেন ঘন কুয়াশা৷ তীর দেখতে না পেয়ে, তিনি তার চেষ্টায় নিবৃত্ত হন৷ চ্যাডউইক খুবই হতাশাগ্রস্ত হলেন, যখন দেখলেন তিনি তীর থেকে মাত্র আধমাইল দুরত্বে ছিলেন৷
তার লক্ষ্য দৃশ্যমান ছিলনা বলে তাকে নিবৃত্ত হতে হয়েছিল৷ অন্য বাধা বিপত্তি তাকে নিবৃত্ত করতে পারেনি৷ তিনি বললেন, “আমি কোন অজুহাত দেখাচ্ছি না৷ যদি আমি তীর দেখতে পেতাম, ডাঙা দেখতে পেতাম, আমি নিশ্চই সাফল্য পেতাম৷
" দু'মাস পরে তিনি ক্যাটেলিনা চ্যানেল সাঁতরে পার হলেন৷ খারাপ আবহাওয়া সত্ত্বেও তার লক্ষ্যে তিনি অবিচলিত ছিলেন৷ এবারে তিনি শুধু সফলই হলেন না, পুরুষ সাঁতারুদের সময়ের যে রেকর্ড ছিল, তার থেকে ২ ঘন্টা কম সময়ে তার সাঁতার শেষ করলেন৷
লক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ কেন?
অত্যন্ত সূর্যকরােজ্জ্বল দিনেও খুব শক্তিশালী আতস কাঁচ কাগজে আগুন জ্বালাতে পারবেনা যদি কাঁচটি সব সময়ে নাড়ানাে হয়৷ কিন্তু যদি লক্ষ্যস্থির করে আতস কাচটিকে এক জায়গায় ধরে রাখা হয়, তাহলে কাগজে আগুন জ্বলে উঠবে৷ মনঃসংযােগের এই রকম ক্ষমতা৷
একজন লােক পথে যেতে যেতে রাস্তার একটি সংযােগ স্থলে দাঁড়িয়ে পড়ল, একজন বয়স্ক ভদ্রলােককে জিজ্ঞাসা করল, “এই রাস্তা কোন দিকে গেছে? " ভদ্রলােক জানতে চাইলেন, “আপনি কোন দিকে যেতে চান?
লােকটি বলল, “আমি জানি না” বয়স্ক ভদ্রলােক বললেন, “তাহলে যে কোন রাস্তাতেই যান, কারণ তাতে কিছু কি তফাৎ হবে? খুব সত্যি কথা৷ যখন আমরা জানি না কোনদিকে যাচ্ছি, তখন যে কোন রাস্তাতেই যাওয়া যায়৷ ধরুন ১১ জনের এক ফুটবল দল উৎসাহে টগবগ করে ফুটতে ফুটতে উত্তেজনায় টান টান হয়ে খেলতে নেমে দেখলে যে কেউ গোল - পােষ্ট তুলে নিয়ে গেছে. এখন খেলা হবে কী করে?
কিভাবে গােল করা হবে হারা - জেতা কিভাবে নির্ধারণ করা যাবে? নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে পরিচিালিত না হলে উৎসাহ, বনে আগুন লাগার মত ইতস্তত ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষকে হতাশাগ্রস্ত করে৷ লক্ষ্য জীবনকে নির্দিষ্ট পথের নিশানা দেয়৷ আপনি কি কোনও রেলগাড়িতে বা এরােপ্লেনে কোথায় যাচ্ছে না জেনে উঠে পড়বেন৷ নিশ্চিত উত্তর হচ্ছে “না” তাহলে লােকে নিদিষ্ট সক্ষ্য ছাড়াই, কেন জীবনের পথে অগ্যসর হয়?
আরো পড়ুনঃ- কিভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো যায়
স্বপ্ন
লােকে আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্নকে লক্ষ্যের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে৷ স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা ইচ্ছার থেকে কিছু বেশি নয়৷ ইচ্ছা দূর্বল৷ ইচ্ছাকে দৃঢ় করতে হলে প্রয়ােজন হচ্ছে
১ঃ- নির্দিষ্ট পথ
২ঃ- আত্মনিয়োগ
৩ঃ- দৃঢ়সংকল্প
৪ঃ- শৃঙ্খলা বােধ
৫ঃ- মরণপণ৷
এইগুলির দ্বারাই আকাঙ্ক্ষা এবং লক্ষ্য এই দুই এর তফাৎ বােঝা যায়৷ লক্ষ্য হচ্ছে স্বপ্নকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এবং একটি কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা৷ লক্ষ্য কখনও সার্থক কখনও অ - সার্থক হতে পারে৷ লক্ষ্য অস্পষ্ট ইচ্ছা নয়, এটি গভীর আকাঙ্ক্ষা যা স্বপ্নকে সত্যে রূপায়িত করে৷
স্বপ্ন কে বাস্তবে রূপায়িত করার পথঃ-
একটি সুস্পষ্ট লিখিত লক্ষ্য থাকবে৷ এই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য একটি পরিকল্পনা থাকবে৷ দিনে ২ বার এই দুটি জিনিস পাঠ করবেন৷
বেশি সংখ্যায় মানুষ লক্ষ্যস্থির করে না কেন?
এর অনেক কারণ আছে, তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলোঃ-
১ঃ- একটি নিরাশাবাদী মনােভাব; অনেকে সাফল্যের সম্ভাবনার থেকে বাধা - বিপত্তির আশঙ্কা বেশি করেন৷
২ঃ- ব্যর্থতার ভয়? যদি সফল না হই, তাহলে কি হবো? অবচেতন মনে এই চিন্তা সর্বদা পােষণ করনে যে, তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকলে কিংবা উদ্দেশ্য সাধিত না হলে কেউ তাদের অসফল বলবে না৷ কিন্তু এই চিন্তার ফলেই তারা প্রথম থেকেই তাে অসফল হয়ে থাকে৷
৩ঃ- উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাব; এটা আমাদের মূল্যবােধের পরিণতি এবং পরিপূর্ণ জীবন যাপনের ইচ্ছার অভাব৷ আমাদের সীমাবদ্ধ চিন্তা আমাদের অগ্রগতিকে ব্যাহত করে৷ একজন জেলে বড় মাছ ধরলেই নদীতে ছেড়ে দিত৷ ছােট মাছগুলি রাখত৷ এই রকম অস্বাভাবিক ব্যবহার লক্ষ্য করে এক ব্যক্তি জেলেকে কারণ জিজ্ঞাসা করল৷ জেলে জবাব দিল- “আমার মাছ ভাজার কড়াইটি ছােট” অনেক মানুষই তাদের জীবনে ছােট মাছ ধরার কড়াই নিয়ে মাছ ধরতে বেরিয়েছে৷ একেই বলে চিন্তার সীমাবদ্ধতা৷
৪ঃ- প্রত্যাখ্যানের ভয়; যদি আমি সফল না হই, তাহলে অন্য লােকে কী বলবে?
৫ঃ- দীর্ঘসূত্রতা; “একদিন আমি আমার লক্ষ্য স্থির করবাে” -এই রকম চিন্তা উচ্চাশার অভাই সূচিত করে৷
৬ঃ- নিম্ন মানের আত্মবিশ্বাস; কোনও ব্যক্তি অন্তর থেকে চালিত না হলে এবং অনুপ্রেরণা না পেলে তার নিজের প্রতি বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা জন্মায় না৷
৭ঃ- লক্ষ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করার অক্ষমতা; কেউ তাদের হাতে ধরে শিখিয়ে দেয়নি, এবং তারাও লক্ষ্য স্থির করা সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করেনি৷
৮ঃ- লক্ষ্য স্থির করার বিষয়ে জ্ঞানের অভাব; অনেকেই লক্ষ্য স্থির করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানে না৷ তাদের জন্য ধাপে ধাপে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে সাহায্য করবে এই রকম এক নির্দেশকের প্রয়ােজন৷ লক্ষ্য স্থির করা হচ্ছে, একের পর এক, কয়েকটি পদ্ধতির সমষ্টি৷ এরােপ্লেনের - এর টিকিট কিনলে তাতে কী নিদের্শ দেওয়া থাকে৷
আরো পড়ুনঃ- কম বয়সে ধনী হবার সেরা উপায়
যাত্রা শুরুর স্থান গন্তব্য স্থান * ভ্রমণের শ্রেণী বিভাগ টিকিটের মূল্য * যাত্রার দিন৷ মেয়াদ ফুরাবার তারিখ যদি আপনি জিজ্ঞাসা করেন যে জীবনের প্রধান লক্ষ্য কী? তাহলে অনেক ব্যক্তি সম্ভবত অস্পষ্ট জবাব দেবেঃ যেমন, “আমি সফল হতে চাই, সুখী হতে চাই এবং সচ্ছল জীবন যাত্রা চাই” এবং এই রকম কিছু৷ এগুলি ইচ্ছা মাত্র, কোনটিই নিদিষ্ট লক্ষ্য নয়৷
লক্ষ্যের নিম্নলিখিত গুণগুলি থাকবেঃ-
১ঃ- সুনির্দিষ্ট; -যেমন ধরুন, আমার লক্ষ্য হচ্ছে, আমি ওজন কমাবাে, কিন্তু এটি একটি ইচ্ছা মাত্র৷ এটি লক্ষ্য হয়ে উঠবে যখন আমি সুনির্দিষ্ট ভাবে ঠিক করবাে যে আমি ১০ দিনে ১০ পাউন্ড কমাবো, না পারলে খাওয়া ছেড়ে দেবাে৷
২ঃ- লক্ষ্য হবে পরিমাপযােগ্য; যদি আমরা পরিমাপ করতে না পারি, তাহলে সেই লক্ষ্য সাধন করতেও পারব না৷ পরিমাপ করার অর্থ হচ্ছে, লক্ষ্যের পথে অগ্রগতিকে বিচার করে দেখা৷
৩ঃ- লক্ষ্য অবশ্যই সাধনযােগ্য হবে; এর অর্থ এই যে লক্ষ্য এমন হবে যে, তা লাভ করার জন্য কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হলেও সমস্ত বিপত্তি অতিক্রম করেও তা লাভ করা সম্ভব৷ লক্ষ্য সামর্থ্যের বাইরে হলে তা হবে নিরাশাব্যঞ্চক৷
৪ঃ- বাস্তবানুগ; যে ব্যক্তি ৩০ দিনে ৫০ পাউন্ড ক্ষতি স্বীকার করতে চায়, তাকে বলা হয় অবাস্তববাদী৷
৫ঃ- সময়সীমা; প্রত্যেক লক্ষ্যেরই একটি শুরুর তারিখ থাকবে এবং একটি সমাপ্তির তারিখ থাকবে৷ লক্ষ্য হবে৷
১ঃ- স্বল্প মেয়াদী -১ বৎসরের মধ্যে লক্ষ্য সিদ্ধ হবে৷
২ঃ- মধ্য মেয়াদী -৩ বৎসরের মধ্যে সিদ্ধ হবে৷
৩ঃ- দীর্ঘ মেয়াদী -৫ বৎসরের মধ্যে সিদ্ধ হবে৷ ৫ বৎসরের থেকেও বেশি সময় লাগতে পারে লক্ষ্য লাভের জন্য৷ কিন্তু তা হয়ে দাঁড়ায় জীবনের উদ্দেশ্য৷ জীবনের উদ্দেশ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ তা না থাকলে আমরা দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে পারি না; কেবল মাত্র লক্ষ্য সিদ্ধির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি৷ যদি আমাদের লক্ষ্যগুলি খন্ড খন্ড করে ফেলি তবে সহজেই সেইগুলি সিদ্ধ করা যায়৷ জীবন দীর্ঘ হলে দুঃসাধ্য হয়, কিন্তু যদি জীবন যাপনকে ছােট ছােট প্রয়াসের মধ্যে ভাগ করে নিই তবেই তাে সহজ হয়ে ওঠে৷
লক্ষ্যের ভারসাম্য থাকা উচিতঃ-
আমাদের জীবন ৬ টি তার বিশিষ্ট একটি চাকার মতো৷ এই তারগুলি জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করে৷
১ঃ- পরিবার; পরিবার ও আমাদের ভালাে লাগার মানুষগুলির জন্যই আমরা জীবন জীবনযাপন ও জীবিকা অর্জন করি৷
২ঃ- আর্থিক; আমাদের জীবন ধারণের জন্য যে অর্থের প্রয়ােজন হয়, জীবিকা তা সরবরাহ করে৷
৩ঃ- শারীরিক; স্বাস্থ্য ব্যতীত অন্য সমস্ত অর্থহীন হয়ে যায়৷
৪ঃ- মানসিক; জ্ঞান ও প্রজ্ঞা মানসিক দিক থেকে বাচার উপাদান জোগায়৷
৫ঃ- সামাজিক; প্রত্যেক মানুষ এবং সংস্থার সামাজিক দায়িত্ব আছে৷ সেই দায়িত্ব পালন না করলে সমাজ মুমূর্ষ হয়ে ওঠে৷
৬ঃ- আত্মিক; আমাদের মূল্যবােধের চেতনার ওপর নির্ভর করে আমাদের নীতিবােধ ও চরিত্র৷
এই তারগুলির যদি একটিও যথাস্থানে না থাকে, তাহলে জীবনের ভারসাম্য নষ্ট হয়৷ কয়েক মিনিট সময় নিয়ে চিন্তা করে দেখুন, এই ৬ টির মধ্যে ১ টি না থাকে, তাহলে জীবন কিরকম হবে৷ আমাদের দু'রকমের শিক্ষার প্রয়ােজন৷ আমাদের শিখতে হবে কী করে জীবিকা অর্জন করতে হয় এবং সেইসঙ্গে কিভাবে জীবনযাপন করতে হয়৷
অনেকেই তাদের জীবিকাতে এমনভাবে মশগুল হয়ে যায় যে তাদের পরিবারের প্রতি মনােযােগ দেয় না৷ নিজের স্বাস্থ্য ও সামাজিক দায় দায়িত্বের প্রতিও উদাসীন হয়ে পড়ে৷ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন যে তার পরিবারের অন্নসংস্থানের জন্যই অন্যান্য বিষয়ে উদাসীন হয়েছেন৷ কিন্তু এই উদাসীনতা জীবনের পক্ষে ক্ষতিকর৷
জীবিকার তাড়নায় আমরা যখন বাড়ি থেকে কাজের জায়গায় যাই, বাচ্চারা তখন ঘুমায়, আবার যখন আমরা বাড়ি ফিরি তখনও ওরা শুয়ে পড়ে৷ ২০ বৎসর এই রকম চলার পর, যখন আমরা ফিরে তাকাই তখন আর আমাদের পরিবারকে খুঁজে পাই না - এই অবস্থা মর্মান্তিক৷
আরো পড়ুনঃ- জীবনে সাফল্য অর্জন করার উপায়
পরিমাণ নয়, গুণগত মান
অনেকে বলেন পরিবারের সঙ্গে কতটা পরিমাণ সময় কাটাচ্ছি, তার থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই কিভাবে পরিবারকে সাহায্য করছি, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভালাে করে ভেবেদেখুন এই ধারণা প্রকৃত সত্য কিনা৷ ধরুন আপনি শহরের সবচেয়ে ভালাে একটি রেস্তরাতে গিয়েছেন৷
সেখানে ইংল্যান্ড থেকে আনা কাটা - চামচ, ফ্রান্স থেকে আনা কাপ - ডিস্ সুইজারল্যান্ড থেকে আনা চকোলেট দিয়ে টেবিল সাজিয়ে আপনাকে আপ্যায়ন করলাে৷ আপনি সােনার পাতের ওপর খােদাই করা খাদ্যতালিকা নিয়ে ১ প্লেট বারবিকিউ চিকেন দেওয়ার আদেশ দিলেন৷
কয়েক মিনিটের মধ্যেই পরিচারক খুব সুস্বাদুভাবে তৈরি মুরগীর একটি ছােট অংশ আপনার জন্য নিয়ে এলাে৷ সেটি খাওয়ার পর আপনি জিজ্ঞাসা করলেন, “এইটুকু মাত্র, আর কিছু নেই?” পরিচারক জবাব দিল, “পরিমান নয়, গুণগত মানই এখানে বিবেচ্য” আপনাকে বলতেই হল যে, আপনার তখনও ক্ষুধা মেটেনি, কিন্তু পরিচারক আপনাকে একই জবাব দিল৷
আশা করি ব্যক্তব্যটি পরিষ্কার করে বােঝানো গিয়েছে অর্থাৎ গুণগত মানেই সব চাহিদা মিটে যায় না৷ গুণগত মানও যেমন প্রয়ােজন, তেমনি পরিমানও প্রয়ােজন৷ আমাদের পরিবারের জন্য দুইয়েরই প্রয়ােজন আছে৷
স্বাস্থ্যঃ- অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে আমরা স্বাস্থ্য নষ্ট করি এবং পরে স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে গিয়ে অর্থ নষ্ট করি৷
সামাজিক দায়িত্বঃ- অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে আমরা সামাজিক দায়িত্ব কে অগ্রাহ্য করি৷ অবস্থা এমনই সঙ্গিন হয়ে ওঠে যে অন্যেরা আমাদের সামাজিক ভাবে অগ্রাহ্য করতে শুরু করে৷
আপনার লক্ষ্য পুঙ্খানুপুঙ্গ রূপে পরীক্ষা করুনঃ- যার কোনও লক্ষ্য নেই সে কখনও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না৷ লক্ষ্য উঁচু না রাখা একটি বড় ভুল৷ যারা সফল হতে চান, তারা লক্ষ্যের দিকে নজর রাখেন - আর যারা হেরে যান, তারা সব সময় লক্ষ্যসাধনের বাধাকেই বড় করে দেখেন৷ আমাদের লক্ষ্যকে এমন উঁচুতে নিবদ্ধ করা উচিত, যাতে আমরা লক্ষ্য সাধনে উদ্বুদ্ধ হই, অথচ অবাস্তব বলে হত্যশার সৃষ্টি না করে৷ আমরা যা করি তা হয় আমাদের লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে যায়, অথবা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে অন্য পথে চালিত হই৷
প্রত্যেকটি লক্ষ্যকেই নিম্নলিখিত মানদন্ডের নিরিখে মূল্যায়ন করা উচিতঃ
১ঃ- এই লক্ষ্যের মধ্যে কতটা সত্য আছে৷
২ঃ- এটি কি সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তির প্রতি সুবিচার করবে?
৩ঃ- এর ফলে কি আমি আস্থা অর্জন করবাে?
৪ঃ- এই লক্ষ্য কি আমাকে স্বাস্থ্য, সম্পদ ও মানসিক শান্তি দিতে সক্ষম হবে৷
৫ঃ- এই লক্ষ্য কি আমার অন্যান্য লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
৬ঃ- আমি কি লক্ষ্য সাধনে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারি?
আরো পড়ুনঃ- Sence Of Humour বাড়ানোর উপায়
নিম্নলিখিত উদাহরণগুলি এই মানদন্ডের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়েছেঃ
কঃ- যদি লক্ষ্য হয় যে আমার অর্থিক অবস্থা যাই হােক না কেন, আমি সুস্বাস্থের দৃষ্টান্তস্থল হব৷ তাহলে খুব স্বাভাবিক দেখা যাবে যে, কিছুদিন পরে স্বাস্থ্যরক্ষা করা কঠিন হচ্ছে৷ এর অর্থ, আমার লক্ষ্য অন্যান্য লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়৷
খঃ- একজন মানুষ অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারে কিন্তু যদি তার ফলে তার পরিবার ও স্বাস্থ্য নষ্ট হয়, তাহলে তার কোন মূল্য থাকে না৷ তাই নয় কি?
গঃ- এক ব্যক্তি মাদক দ্রব্য বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা রােজগার করতে পারে৷ কিন্তু তারপর তাকে জীবনের অবশিষ্টাংশ আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে বেড়াতে হবে৷ ফলে তার মানসিক শান্তি থাকবে না এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও ব্ৰিত হবে, তার উপর আস্থাও থাকবে না৷ সেই জন্য প্রত্যেকটি লক্ষ্য এই মানদন্ডে মূল্যায়ন করা উচিত এবং জীবনের সব লক্ষ্যগুলি পরস্পরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত৷
ঘঃ- লক্ষ্য লাভের জন্য কর্মপ্রচেষ্টা না থাকলে সমস্ত লক্ষ্যই শূন্য স্বপ্নের মতাে হয়ে যায়৷ কাজের দ্বারা স্বপ্নকে নিদিষ্ট লক্ষ্যে পরিণত করতে হয়৷ যদি আমরা লক্ষ্যভ্রষ্ট হই, তবুও আমরা সব বিষয়ে ব্যর্থ হবাে না৷ লক্ষ্য লাভে বিলম্বের অর্থ ব্যর্থতা নয়৷ কেবল লক্ষ্য লাভের জন্য পুনরায় অন্যতর পরিকল্পনা রচনার প্রয়ােজন হয়৷ ভালাে ছবি নেওয়ার জন্য যেমন ক্যামেরার ফোকাস পড়ার প্রয়ােজন হয়, তেমনি সৃজনশীল জীবন যাপনের জন্য লক্ষ্যের দরকার৷
ব্যর্থ প্রচেষ্টার অর্থ কর্ম সম্পাদন নয়ঃ-
কাজ করা এবং সফলভাবে কাজ শেষ করার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে৷ ফেব্রি নামে এক ফরাসী বৈজ্ঞানিক একদল শুয়ােপােকা পরীক্ষা করে দেখিয়েছিলেন সামনে যে থাকে, শুয়াপােকা তাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে৷ ফেব্রি একটি বৃত্তাকার ফুলদানীতে শুয়ােপােকাদের এমন ভাবে চালনা করলেন যে, সামনের শুয়ােপােকাটি প্রকৃতপক্ষে দলের পিছনে এসে গেল৷
খাবার হিসাবে পাইন গাছের কিছু ফুল মাঝখানে রেখে দেওয়া হলো৷ শুয়ােপােক্যগুলি বৃত্তাকারে, সেই ফুলদানির মধ্যে ঘুরে বেড়াতে থাকলাে, অবশেষে এক সপ্তাহ এই ভাবে ঘােরার পরে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে মারা গেল, যদিও সামনেই তাদের খাদ্য পাইনের ফুল রাখা ছিল৷
এই শুয়ােপােকা গুলির ব্যবহার থেকে একটি শিক্ষনীয় বিষয় আছে কিছু করলেই যে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এরূপ মনে করা ঠিক নয়৷ লক্ষ্যের পথে কতদূর অগ্রসর হওয়া গেল তা জানার জন্য কাজের মুল্যায়ন প্রয়ােজন৷ এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে গাড়ি করে নিয়ে বেরিয়েছিলেন৷
কিছুক্ষণ পরে স্ত্রী বললেন, আমরা বােধহয় ভুল পথে যাচ্ছি” স্বামী জবাব দিলেন, “তাতে কিছু যায় আসে না, আমরা দারুণভাবে নিজেদের উপভােগ করছি " আমরা যদি কেবল কাজকরা এবং কার্যসিদ্ধির নিদিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করার মধ্যে গুলিয়ে ফেলি, তাহলে আমরা মজা উপভােগ করব বটে, কিন্তু লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হতে পারব না৷
আরো পড়ুনঃ- জীবনের জটিল সমস্যার সমাধান কিভাবে বের করবেন
অর্থহীন লক্ষ্যঃ- এক চাষীর এক কুকুর ছিল, সে রাস্তার ধারে গাড়িআসার জন্য অপেক্ষা করতাে৷ গাড়ি এলেই চিৎকার করতে করতে গাড়ির সঙ্গে দৌড়ে গাড়িকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাে৷ একদিন এক প্রতিবেশী চাষীকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তােমার কি মনে হয় কুকুরটি গাড়ির সঙ্গে দৌড়ে পাল্লা দিয়ে পারবে” চাষী জবাব দিল, “পারবে কি পারবে না, তার জন্য আমার চিন্তা নেই, আমার ভাবনা যদি একদিন গাড়িকে টেক্কা দিয়ে যায়, তাহলে কী অবস্থা হবে? অনেক মানুষই কুকুরটির মতাে অর্থহীন লক্ষ্যের দিকে দৌড়ায়৷
কাজের পরিকল্পনাঃ-
১ঃ- নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করুন৷
২ঃ- সেই লক্ষ্যগুলি নিখে ফেলুন৷
৩ঃ- দিনে ২ বার সেই লক্ষ্যগুলি পড়ুন, সকালে একবার ও রাতে একবার৷
৪ঃ- লক্ষ্যগুলিকে নাগালের সামান্য বাইরে রাখুন কিন্তু যেন দৃষ্টির বাইরে না যায়৷
৫ঃ- কাজের অগ্রগতি মাঝে মাঝে পরীক্ষা করুন৷
আরো পড়ুনঃ- কিভাবে নিজের সঠিক ক্যারিয়ার বাছাই করবেন
বইটিতে জীবন সংক্রান্ত আরো অনেক তথ্য দেওয়া আছে৷ পুরো বইটি বাংলা অনুবাদে পড়তে চাইলে কমেন্ট করে জানাবেন বইটির PDF ফাইল আপনাকে দেওয়া হবে৷
Thanks to comment Jibon Somossa official blog. Stay with us for more content. Follow us to Facebook. www.facebook.com/jibonsomossa.blog