ফড়িং—বাংলার মাঠেঘাটে, পুকুরপাড়ে কিংবা জলাভূমির ধারে প্রায়ই উড়ে বেড়াতে দেখা যায় এই নিসর্গসৌন্দর্যের প্রতীককে। কিন্তু এই ক্ষণিকের উড়ন্ত সৌন্দর্য শুধু রঙিন পাখার সৌন্দর্য নিয়েই প্রকৃতিতে তার অবস্থান তৈরি করেনি, বরং সে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে নিজেকে উৎসর্গ করেছে—নিঃশব্দে, নিঃস্বার্থে, নিরলসভাবে।
🦟 প্রতিদিনের রক্তহীন যুদ্ধ
একটি পূর্ণবয়স্ক ফড়িং প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ থেকে ৩০০টি মশা খেয়ে থাকে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—একটি ফড়িং তার জীবদ্দশায় হাজার হাজার মশা ধ্বংস করে! এরা নিশ্ছিদ্রভাবে ওড়ার সময় তাদের জটিল চোখ দিয়ে নিশানা করে ধরে ফেলে মশাকে। নিঃশব্দে এই শিকার কার্যক্রম চলে চলে প্রতিনিয়ত, যেন এক প্রকৃতি-নিযুক্ত শিকারি।
তাদের গঠনই এমন—তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি, গতিশীল পাখা, আর ক্ষিপ্র প্রতিক্রিয়া—যা মশার মত ক্ষুদ্র ও ক্ষিপ্র পতঙ্গকে সহজেই ধরে ফেলতে পারে। তারা এমন দক্ষ শিকারি যে তাদের সফলতা হার ৯৫% এরও বেশি, যা পৃথিবীর যেকোনো শিকারির মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।
🌱 প্রকৃতির স্নেহময় সেনা
ড্রাগনফ্লাই শুধু মশা খেয়েই থেমে থাকে না। তারা মাছি, ছোট পোকামাকড়, এমনকি কিছুক্ষেত্রে কীটপতঙ্গের ডিমও খেয়ে থাকে, যা আমাদের পরিবেশকে সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে সাহায্য করে।
এই কারণে অনেক বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদ ফড়িংকে বলেন "প্রাকৃতিক কীটনাশক"—যারা কোন রাসায়নিক ছাড়াই মানবসভ্যতাকে রক্ষা করে।
❗ আমরা যা করছি, তা বিপরীত...
দুঃখজনকভাবে, অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে আমরা অনেকেই ফড়িংকে তুচ্ছজ্ঞান করি, অনেক সময় মেরে ফেলি শুধুমাত্র খেলার ছলে কিংবা শখে। কিন্তু একটি ফড়িং মারা মানে হলো—
প্রতিদিন শতাধিক মশাকে বাঁচিয়ে দেওয়া।
অর্থাৎ, নিজের হাতেই নিজের ক্ষতির রাস্তা তৈরি করা।
মশা শুধু বিরক্তিকর নয়, এটি ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস-এর মতো প্রাণঘাতী রোগের বাহক। অথচ এই রোগের বিরুদ্ধে আমাদের প্রকৃতির নিজস্ব সৈনিক—ফড়িং—আমাদের অজান্তেই লড়ে যাচ্ছে!
🌍 ফড়িং আছে মানেই প্রকৃতি সুস্থ
ফড়িং পরিবেশের একটি সূচকপ্রজাতি। অর্থাৎ, যেখানে ফড়িং বেশি দেখা যায়, বুঝতে হবে সেখানে জলাশয় সুস্থ, বায়ু বিশুদ্ধ, প্রকৃতি এখনও জীবিত। কিন্তু জলাভূমি নষ্ট হলে, কীটনাশক ব্যবহারে বা নগরায়ণের চাপে যখন তারা বিলুপ্ত হতে শুরু করে, তখন আমরা খেয়াল না করেই প্রকৃতির ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি।
💡 আমাদের করণীয় কী?
ফড়িং দেখলে মেরে ফেলো না—তাকে রক্ষা করো।
নিজের চারপাশে জলাশয় ও সবুজের যত্ন নাও।
শিশুদের শেখাও—ফড়িং খেলা নয়, প্রকৃতির বন্ধু।
রাসায়নিক স্প্রে ও কীটনাশক কম ব্যবহার করো।
শহর বা গ্রামে পুকুর ও জলাশয় সংরক্ষণ করো—সেই সঙ্গে ফড়িংও থাকবে।
🐲 শেষ কথা
ফড়িংদের কথা কেউ বলে না। তারা নিঃশব্দে আসে, উড়ে বেড়ায়, শিকার করে, আমাদের রক্ষা করে—কোনো প্রশংসা বা পুরস্কারের প্রত্যাশা ছাড়াই। তারা প্রকৃতির ছায়াসেনা।
তাই, একটি ফড়িং বাঁচাও মানে একশোটি মশার হাত থেকে মুক্তি পাও।
এটা শুধু ভালোবাসার আহ্বান নয়, এটা বাঁচার প্রশ্ন।
Sk Brehot
Thanks to comment Jibon Somossa official blog. Stay with us for more content. Follow us to Facebook. www.facebook.com/jibonsomossa.blog