ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন

ত্বক আপনার শারীরীক সৌন্দর্যের ভিত্তি ! যদি ভিত্তিই দুর্বল হয়, তাহলে তার ওপর মজবুত বাড়ী কি করে গড়ে উঠবে ? সুতরাং, ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার দিকে আপনাকে নিয়মিত রূপে দৃষ্টি দিতে হবে - একমাত্র তাহলেই আপনার স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য বজায় থাকবে৷ 

 

সাধারণ ত্বক : 

এটা তেলতেলেও হয় না, আবার শুষ্কও হয়না৷ এটা দেখলে খুবই মসৃণ এবং মােলায়েম মনে হয়৷ কখনাে - কখনাে দু - একটা ব্রণও বেরিয়ে আসে৷ 

সবার আগে মুখকে সাধারণ সাবান আর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন৷ এর পর ক্লিনজিং ক্রীম দিয়ে মুখের ময়লা মুছে ফেলুন৷ তুলােয় ঝিনজিং মিল্ক নিয়ে পুরাে মুখে রগড়ালে এতে মুখের ধুলাে - মাটি উঠে মুখ পরিষ্কার হয়ে পড়বে৷ গাল, থুতনী, কপাল আর গলায় লাগান একটু বেশী ক্রীম৷ 

ক্রীম লাগাবার সময় হাতের আগ্রভাগ ওপরের দিকে রাখুন৷ লেগে থাকা ক্রীম তুলাে দিয়ে মুছে ফেলুন৷ এইভাবে প্রতি দিন রাতে একবার অবশ্যই মুখ পরিষ্কার রাখুন৷ এতে মুখ সর্বদা পরিষ্কার থাকবে৷ ক্রীম লাগাবার সময় চুল রবার ব্যাণ্ড দিয়ে বেঁধে নেবেন যাতে চুলে ক্রীম না লেগে যায়৷ 

সকালে সামান্য সাবান লাগিয়ে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন৷ ধােবার পর তুলােয় স্কিন টনিক লাগিয়ে মুখে লাগান৷ এতে মুখের রােমকূপ বন্ধ হয়ে পড়বে৷ খােলা রােমকূপ দিয়ে প্রসাধন ভেতরে ঢুকে পরে ক্ষতি করে৷ স্কিন টনিকের জায়গায় গোলাপ জলও ব্যবহার করা যেতে পারে৷ 

মেক - আপ করার আগে মুখে ময়েশ্চারাইজারের বেস দিতে ভুলবেন না৷ এরপর আপনি নিজের মুখকে বিভিন প্রসাধন দ্বারা সাজাতে পারেন৷ সাধারণ ত্বক কোন রকম সমস্যা উৎপন করে না, কিন্তু বিন্দুমাত্র অসতর্ক হলেই ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠে৷ তাই ত্বকের প্রতি আপনাকে প্রচণ্ড যত্ন নিতে হবে৷ স্নান করার আগে মুখে গাজরের রস পুদিনা পাতার রস লাগান৷ ১০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন৷ এতে আপনার ত্বক সর্বদা কান্তিময় হয়ে থাকবে৷ 

আরো পড়ুনঃ- ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যেকোন সমস্যার সমাধান

শুষ্ক ত্বকঃ- 

এই ত্বক দেখতে রুক্ষ, নীরস দেখায়, বিশেষ করে গাল চোখের আশপাশে৷ এমন কি যুবাবস্থাতেই গাল, চোখ আর ঠোঠের আশপাশে দাগ পড়ে যায় ! শীতকালে এই ত্বক লাল হয়ে পড়ে, কিন্তু এই ধরনের ত্বকের একটা লাভ হল যে, এই ত্বকে ব্রণ হয়না৷ পরিষ্কার করার জন্য গ্লিসারিন সাবান লাগিয়ে মুখ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন৷ 

এর পর তেলতেলে ক্লিনজিং ক্রীম লাগান গাল, কপাল, নাক আর চোখের চারপাশে৷ কিন্তু আঙুলের ডগা দিয়ে ধীরে - ধীরে ! পাঁচ দশ মিনিট মালিশের পর তুলাে দিয়ে মুছে ফেলুন৷ আপনার ত্বক শুষ্ক হলে দিনে দুবার এমন করুন, সকালে এবং রাতে ! সকালে উঠে সবার আগে মুখ জল দিয়ে ফেলুন, তারপর জলের সঙ্গে গােলাপজল মিশিয়ে তুলাের সাহায্যে মুখে লাগান৷ 

মেক - আপ করার আগে তেলতেলে বেসের ময়েশ্চারাইজার লাগানাে উচিত৷ এটা বাদ দিয়ে কখনাে মেক - আপ করবেন না, নয়তাে প্রসাধন ত্বকের ভেতরে চলে গিয়ে ক্ষতি করবে৷ গ্লিসারিন শুষ্ক ত্বককে কোমল করে৷ 

এই ত্বক গরমের তুলনায় শীতে বেশী সমস্যার সৃষ্টি করে, কারণ শীতকালের হাওয়া একে আরও শুষ্ক বানিয়ে তােলে৷ তাই শুষ্ক ত্বকের দেখাশােনা বিশেষ রূপে করা উচিত ! মুখে বাড়ীতে তৈরী ‘ মাস্ক ' লাগান !

আরো পড়ুনঃ- ত্বকের যত্নে হলুদের উপকারিতা

১ঃ- ডিমের হলুদ অংশে মুলতানী মাটি মিশিয়ে মুখে লাগান, শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন৷ 

২ঃ- মধু, কাঁচা দুধ আর লেবুর রস সমান মাত্রায় মিশিয়ে মুখে লাগান৷ 

৩ঃ- বেসন, শুদ্ধ ঘি, জল আর দুধ মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক কোমল আর চমকালাে হয়ে পড়ে৷ 

৪ঃ- ২৫০ গ্রাম মিল্ক পাউডার, আধা চামচ বাদাম রােগন আর পারফিউমের কয়েকটা ফোঁটা স্নান করে গরম জলে ঢেলে বাথটবে কিছুক্ষন বসে থাকুন, এতে সর্বশরীর তাজা হয়ে উঠবে৷ শুষ্ক ত্বকের ঠোঁঠ খুব তাড়াতাড়ি ফেটে যায়৷ এজন্য আপনি রােজ রাতে ক্রীম বা দুধের ক্রীমে গােলাপজল আর লেবুর রস মিশিয়ে লাগান৷ এতে ফাটা ঠোঁঠ ঠিক হয়ে পড়বে৷ লিপস্টিক লাগাবার আগে ফাটা ঠোঠে চ্যাপস্টিকের একটা পরত লাগান, এতে ঠোঠ মসৃণ দেখাবে৷ কয়েকটা জিনিষের দিকে আপনাকে নজর রাখতে হবেঃ 

( ১ ) খাবারে দুধ, দই আর মাখনের মাত্রা বাড়ান৷ 

( ২ ) সপ্তাহে অন্ততঃ দু দিন গায়ে ভাল করে তেল মেখে স্নান করুন আর রাতে কোল্ড ক্রীম লাগান৷ 

( ৩ ) স্নানের জল খুব বেশী গরম হবে না, আবার খুব বেশী ঠাণ্ডাও নয়৷ 

( ৪ ) মুখের মেক - আপ সব সময় ক্রীম দিয়ে মুছবেন৷ 

( ৫ ) শীতকালে স্নান করার সময় বাদাম রােগনে লেবুর রস মিলিয়ে মুখ আর ঘাড়ে মালিশ করুন বা মালাহতে বাদাম পিষে মুখে লাগান, একটু পরে ধুয়ে ফেলুন৷ এতে ত্বকের রুক্ষতা দূর হয়ে গিয়ে ত্বক কোমল এবং মসৃণ দেখাবে৷ 

আরো পড়ুনঃ- সুস্থ থাকার সহজ উপায়

তেলতেলে ত্বক:-  

এইরকম ত্বকে তেলতেলে মসৃণ ভাব দেখা যায় আর মেক - আপ ভাল করে টিকতে পারে না৷ তেলতেলে ত্বকে ব্রণ খুব বেশী করে দেখা দেয়৷ এজন্য মেডিকেটেড ক্লীনার, যার বেস তেলতেলে নয় এটা নিন৷ এটা ঘাড়, থুতনী, কপাল আর নাকে ভাল করে মালিশ করুন৷ 

মালিশ করার পর তুলাে দিয়ে মুছে ফেলুন৷ এরপর মেডিকেটেড সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন৷ তেলতেলে ত্বকের লােকেদের নিজের মুখ দিনে দু তিনবার অবশ্যই ধুয়ে ফেলা উচিত৷ মেক - আপ করার আগে এস্ট্রিজেন্ট লােশন নাকের ফুটোয়, থুতনীতে আর কপালে লাগান৷ 

কারণ, শরীরের এই অংশগুলোই বেশী তেলতেলে থাকে৷ মেক - আপ করার আগে ময়েশ্চারায়জার অবশ্যই লাগাবেন৷ এমন কোন তীব্র ক্রীম লাগাবেন না, যাতে ত্বক প্রয়ােজনের তুলনায় বেশী শুস্ক হয়ে পড়ে৷ তাহলে মুখের ওপরের ভাগ বেশী শুস্ক হয়ে পড়বে, যাকে মসৃণ বানানাে মুশকিল হয়ে পড়বে৷ 

ডিমের সাদা অংশকে মুখে ১৫-২০ মিনিট পর্যত লাগিয়ে ঠাণ্ডা বা হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন৷ এতে ত্বক পরিষ্কার থাকবে৷ শশার রস লাগালে ত্বক তাজা থাকবে৷ এছাড়া আপনি নিজের মুখে লেবুও লাগাতে পারেন - যা রোমকুপ রোধ করে৷ ভাপ দিয়ে মুখের রােমকূপ খুলুন আর তারপর এস্ট্রিজেন্ট লাগিয়ে ওগুলাে বন্ধ করে দিন৷ 

তেলতেলে ত্বকের লােকেদের খাবারে ঘি ইত্যাদি কম করে দেওয়া উচিত৷ সবুজ সবজি এবং ফল বেশী করে খাওয়া উচিত৷ যত বেশী সম্ভব জল খান - এতে ত্বকের তেলতেলে ভাব শেষ হয়ে চমক আসে৷ দিনের মধ্যে কমপক্ষে তিনবার সাবান আর গরম জলে মুখের ময়লা ভাল করে ধুয়ে ফেলুন৷ 

আরো পড়ুনঃ- ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্রন দূর করার উপায় 

মিশ্রিত ত্বক:- 

কিছু লােকের ত্বক কিছুটী তেলতেলে আবার কিছুটা শুষ্ক হয়৷ ওদের ত্বকের দেখাশােনা বিশেষভাবে করতে হবে৷ নাকের পাশটা তেলতেলে হয় আর থুতনীর কাছটা হয় শুষ্ক ! কপাল হয় তেলতেলে আর চোখের কাছটা শুস্ক ! 

এজন্য চোখের কোলে ভাঁজ পড়ে যাম আর থুতনী, কপাল আর নাকের আশপাশে ব্রণ বেরিয়ে আসে৷ হাল্কা ক্রীম নিয়ে সেটা তেলতেলে ভাগে লাগিয়ে আঙুলের ডগা দিয়ে মালিশ করুন৷ মালিশ হয়ে যাবার পর সেটা তুলাে দিয়ে মুছে মেডিকেটেড সাবান লাগিয়ে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন৷ তারপর তােয়ালে দিয়ে হাল্কা করে মুখ মুছে ফেলুন৷ 

এই জিনিষ রােজ রাতে শােবার আগে নিশ্চয়ই করুন৷ শুষ্ক ভাগে হাল্কা লােশন আর তেলতেলে অংশে এস্ট্রিভেল্ট লাগান৷ এগিজেন্টের ব্যবহার শুষ্ক অংশে করবেন না, তাহলে ঐ জায়গাটা আরও শুষ্ক হয়ে উঠবে৷ মেক - আপ করার আগে তরল মায়েশ্চারায়জার আর নারিশিং ময়েশ্চারায়জার ক্রীম শুধু গালে লাগান, তারপর মেক - আপ করুন৷ এতে আনার মেক - আপ ভাল বেস পেয়ে যাবে আর প্রসাধন তুকের ওপর প্রভাব ফেলতে পারবে না৷ 

আরো পড়ুনঃ- ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার উপায়