সৌন্দর্য চর্চার ব্যাপারে শীতকাল বেশ সমস্যাপ্রদ৷ শীতকালে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে যায়, ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠে৷ এই শুষ্ক মৌসুমের অসুবিধা থেকে বাঁচার জন্যে আপনাকে কিছু বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে৷ শীতকাল যেমন স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের পক্ষে অসুবিধাজনক, সেরকম স্বাস্থ্যের উন্নতির দিকে যথেষ্ট অনুকলও৷ এই ঋতুতে যদি আপনাকে আহার সন্তলিত হয় ও আপনি নিয়মিত ব্যায়মচর্চা করেন তাহলে আপনার স্বাস্থ্য অবশ্যই ভাল থাকবে৷
খরখরে ত্বকঃ-
হলুদ বাটা, ক্রীম বা স্নেহ জাতীয় পদার্থ দ্বারা আপনি আপনার ত্বক কোমল রাখতে পারবেন৷ শীতকালে হাত, পা ও মুখের চামড়া ফেটে যায়৷ এই অবস্থায় মেকআপ করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার৷
কাজকর্মের পর বাদাম রােগন বা অলিভ অয়েল মালিশ করলে এই সমস্যার হাত থেকে বাঁচা যায়৷ শীতকালে সাবান কম ব্যবহার করবেন৷ দিনে একবার সাবান ব্যবহার করা যথেষ্ট৷ এরপরে ক্লিনজিং ক্রীম দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে টিশু পেপার বা তুলাে দিয়ে মুছে নেওয়া ভাল৷ ক্রীম প্রত্যেক রাতে নিয়মিত ভাবে লাগাবেন৷
এছাড়া গোসলের পর ও রাতে দুধের সর ( অল্প গরম ) ত্বকে মালিশ করলে ত্বক মসৃণ হবে৷ অধিক প্রসাধনী বক্তর ব্যবহার, হেয়ার স্প্রে, গরম জলে স্নান , উগ্র গন্ধযুক্ত পারফিউম, চুল ও ত্বকের শুষ্কতার কারণ হয়৷ কাজেই এসব জিনিস প্রয়ােজন অনুসারে ব্যবহার করা উচিত৷ গোসলের আগে নারকেল তেলে গােলাপজল মিশিয়ে মালিশ করলে ত্বক মসৃণ হয়৷
আরো পড়ুনঃ- ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন
একজিমাঃ-
এই রােগ শীতকালে বেশী কষ্ট দেয়৷ এটা ত্বকের রােগ৷ এতে প্রথমে শরীরে এক লাল আভার সৃষ্টি হয়, যা পরে খরখরে হয়ে ওঠে৷ এ এক ছোঁয়াচে রােগ, কাজেই এর রােগীর থেকে সাবধান থাকা উচিত, শুকনাে নারকেল পুড়িয়ে তার তেল বার করে একজিমায় লাগালে উপকার পাওয়া যায়৷ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া উচিত৷
চুলকুনিঃ-
শীতকালে শুষ্কতার ফলে সমস্ত শরীরে চুলকুনি হয়৷ তুলসী পাতার রসে চন্দনের তেল আর এক চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে চুলকুনির স্থানে লাগান৷ কয়েকদিনের মধ্যেই আরাম পাবেন৷ এ ছাড়া দু'চামচ দইয়ে অলিভ অয়েল আর গােলাপজল মিশিয়ে গোসলের এক ঘন্টা আগে শরীরে মাখুন৷
এরপর অল্প গরম জলে স্নান করুন৷ এতে চুলকুনি কমবে৷ শীতকালে বেশী গরম জলে গোসল করবেন না এবং এই সময় বেশী সাবানও ব্যবহার করা উচিত নয়, কেননা এতে শুষ্কতার সৃষ্টি হয়ে চুলকুনি শুরু হতে পারে৷ কখনও - কখনও রােদ পােহানাে ভাল, এতে শরীরে ঘামের সৃষ্টি হয়ে চুলকুনি কমায়৷
ত্বক ফাটাঃ-
মহিলাদের এ সময় পায়ের গােড়ালিতে ফাটল ধরে৷ গোসলের সময় ভাল করে সাবান লাগিয়ে ঝামা দিয়ে পা ঘষে ধােওয়া উচিত৷ পরে ভাল করে পা পুছে নিন৷ রাতে শোওয়ার আগে গােড়ালিতে অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল লাগিয়ে রাখলে পা ফাটায় আরাম পাবেন৷
ঠাণ্ডা ও শুকনাে হাওয়ার প্রভাব ঠোঁটের ওপর বেশী পড়ে৷ শীতের আগমনের প্রথমেই ঠোঁট ফাটা শুরু হয়৷ ঠোঁটে দুধের সর লাগালে উপকার হবে৷ অল্প কাজকর্ম করলেই যদি আপনার হাতের চামড়া ফেটে যায় তাহলে হাতে হ্যাণ্ড লােশন, গ্লিসারিন লাগাবেন৷ ঠাণ্ডা হাওয়ার থেকে হাতকে রক্ষা করার জন্যে গ্লাবস পরা উচিত৷ এতে হাত গরম থাকবে৷
আরো পড়ুনঃ- ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যেকোন সমস্যার সমাধান
চুলঃ-
শরীরের সঙ্গে চুলও শীতকালে শুকোয়৷ গোসলের আগে ভাল করে চুলে নারকেল তেল মালিশ করুন৷ এতে চুল নরম ও চকচকে হবে৷
অলিভ অয়েলঃ-
অলিভ অয়েল একটি ভাল স্কিন ফুড৷ গোসলের আগে প্রথমে হাত পায়ে ২০-২৫ মিনিট ধরে মালিশ করার পরে গরম জলে গোসল করুন৷
গ্লিসারিনঃ-
গোসলের পরে কয়েক ফেটিা গ্লিসারিন দ্বিগুণ জলে মিশিয়ে সমস্ত শরীরে মাখলে শীতের হাত থেকে অনেকটাহ রক্ষা পাওয়া যায়৷ বিনা জলে গ্লিসারিন মাখবেন না এতে শরীরে ধুলাে - মাটি জমে শরীর বেশী ফাটবে৷
সরিষার তেলঃ-
যেসব প্রদেশে শীত বেশী পড়ে, সেসব জায়গার লােক গায়ে সরষের তেল মেখে মালিশ করে৷ এতে স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য দুইই বজায় থাকে৷ তেলের মালিশ শরীরের পক্ষেও ভাল৷ তেল লাগানাের পরে সাবান ব্যবহার করলে কোনও ক্ষতি হয়না, গোসলের সময় সাবানের পরিবর্তে বেসন গুলেও লাগানাে যেতে পারে৷
বেসনঃ-
বেসন জলে গুলে সমস্ত শরীরে লাগালে দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায়৷ বেসন এক তাে আপনার শরীরের ময়লা তুলতে সাহায্য করে আর দ্বিতীয়ত আপনার শরীরের স্বাভাবিক তৈলাক্ততা শীতের ঠাণ্ডা হাওয়া থেকে রক্ষা করবে৷ এই পেস্ট মুখে, গলায় লাগাতে পারেন৷
ক্লিনজিং মিল্ক বা কোল্ড ক্রীমঃ-
গোসলের দশ মিনিট পূর্বে এর মালিশ করা খুব ভাল৷ কিন্তু এর পর গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করবেন না৷
আরো পড়ুনঃ- ত্বকের যত্নে হলুদের উপকারিতা
দইঃ-
গোসলের আগে শরীরে দই মাখলে ত্বকে উজ্জ্বলতা আসে৷
কোকমের তেলঃ-
রাতে শোওয়ার আগে অল্প গরম করে লাগান, ১৫-২০ মিনিট পরে তুলাে দিয়ে তেল মুছে শুতে যান৷ মুলতানী মাটি কখনোই প্রয়ােগ করবেন না, এতে শুস্কতা বাড়ায়৷
শীতকালে স্লীভলেস ড্রেস বা মিনি ড্রেস ব্যবহার করবেন না৷ বরং এমন পােষাক পরবেন যাতে আপনার শরীর ভাল ভাবে ঢাকা থাকে৷ শােওয়ার সময় সুতির মােজা পরতে পারেন, তাতে পা গরম থাকবে৷ শীতকালে গরম পােষাক যথেষ্ট পরা উচিত, তবে অতিরিক্ত পােশাক পরাও ঠিক নয় যাতে আপনার হাঁটতে - চলতে অসুবিধা হয়৷
শীতকালে রােদ পােহাতে ভাল লাগে৷ তবে, বেশী রোদে মুখের ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে৷ অতএব রােদের দিকে পিঠ দিয়ে বসে রোদ পােহানাে উচিত অথবা মুখ রােদের থেকে আড়াল করে রেখে বসে পা রােদের দিকে রাখা ভাল৷
শীতের প্রকোপ যতই হােক না কেন রাতে শােবার সময় ঘরের জানলা খােলা রাখা উচিত যাতে তাজা হাওয়া - বাতাস ঘরে বইতে পারে৷ যা আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল৷ আপনার দৈনন্দিন ভােজনে ঘি, দুধ, মাখন ও ফলের পরিমাণ বৃদ্ধি করুন৷ এতে শরীর গরম থাকবে৷ এইভাবে আপনি প্রচণ্ড শীতেও নিজের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বজায় রাখতে সক্ষম হবেন৷
আরো পড়ুনঃ- ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্রন দূর করার উপায়
Thanks to comment Jibon Somossa official blog. Stay with us for more content. Follow us to Facebook. www.facebook.com/jibonsomossa.blog