hh

অশান্তিতে ভুগলে যেসব রােগ হয়

অশান্তিতে ভুগলে যেসব রােগ হয়

ডাক্তারদের কাছে যত রােগী আসে তাদের শতকরা সত্তর জন দুশ্চিন্তা এবং ভয় ত্যাগ করলে রােগমুক্ত হতে পারে৷ শতকরা এই সত্তরজনের রােগ কাল্পনিক তা আমি বলছি না৷ ধরুন, সাময়িক অগ্নিমান্দ্য, হৃদরােগ, গ্যাস্ট্রিক, পেটের ঘা অর্থাৎ পেটের আলসার, অনিদ্রা, মাথার যন্ত্রণা, প্যারালাইসিস - এই ধরনের রােগ তাদের হয় এবং রােগগুলাে কেন হয়, জানেন? 

হ্যা, দুশ্চিন্ত থেকে হয়৷ তাই বলছিলাম, দুশ্চিন্তা আর ভয় যদি এরা তাড়াতে পারে, তাহলে এদের রােগ সেরে যেত৷ ভয়ের কথাই ধরুন না৷ ভয় থেকে জন্ম হয় উদ্বেগের৷ উদ্বেগ থেকে শুরু হয় পেটের গােলমাল৷ পেটের গােলমাল থেকে হয় গ্যাস্ট্রিক আলসার৷ আর একজন ডাক্তারের বক্তব্যও এই রকম৷ 

আরো পড়ুনঃ- দুশ্চিন্তার ক্ষতিকর প্রভাব সমূহ

তিনি বলেন: “মানুষ যা খায় তাতে পেটের আলসার হয় না, মানুষকে যে জিনিস খায় ( দুশ্চিন্তা ) তা থেকেই পেটের আলসার “মানসিক ভারসামন্যহীনতার কারণেই পেটের আলসার হয়” কথাটা বলেছেন মহিলা ক্লিনিকের একজন ডাক্তার৷ তিনি বা অন্য ডাক্তাররা অনুমানের উপর নির্ভর করে এসব কথা বলেছেন তা যেন ভাববেন না৷ 

দুশ্চিন্তা থেকে পেটের আলসার হয় এটা এখন প্রমাণিত সত্য৷ মহিলা ক্লিনিকের পনের হাজার রােগীকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, পরীক্ষার ফল নিম্নরূপঃ প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনের রােগ হয়েছে দুশ্চিন্তার ফলে৷ শুধু যে দুশ্চিন্তা থেকে পেটের আলসার হয় তা নয়৷ দুশ্চিন্তার সাথে রয়েছে ভীতি, আতঙ্কবােধ, অস্থিরতা, অত্যধিক স্বার্থপরতা, অস্বাভাবিক ক্রোধ, ঈর্ষা এবং বাস্তবের সাথে মেনে চলার অক্ষমতা৷ 

এইসব কারণেই পেটের রােগ এবং আলসার হয়৷ পেটের আলসার অত্যন্ত কষ্ট দেয়৷ এই রােগের মানুষ মরেও প্রচুর৷ মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে এই রােগ দশম স্থান দখল করে রেখেছে, লাইফ পত্রিকার হিসেবে অনুযায়ী৷ ডাক্তার হেরাল্ট সি, হেবিয়েন তার একটা প্রবন্ধ বলেছেনঃ ১৭৬ জন ব্যবসায় সংক্রান্ত অফিসারকে পরীক্ষা করে আমি প্রমাণ পেয়েছি - এদের এক - তৃতীয়াংশ ব্যক্তি উদ্বেগজনিত তিন রকমের রােগে আক্রান্ত হয়েছে৷ 

রােগ তিনটি হলাে ও হার্টের অসুখ, পেটের আলসার এবং ব্লাড প্রেসার৷ এদের গড়পড়তা বয়স তেতাল্লিশের কিছু বেশি৷ তার যুগে দার্শনিক প্লেটো বলে গেছেন৷ চিকিৎসকদের একটা মস্ত ভুল এই যে, তারা মনকে বাদ দিয়ে সারাতে চান দেহকে৷ প্রকৃতপক্ষে মন এবং দেহ একই ব্যাপার এবং এক জিনিসের চিকিৎসা একইভাবে হওয়া উচিত, আলাদাভাবে নয়৷ প্লেটোর কথা আজ এই তেইশশত বছর পরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে৷ হতাশা, ঘৃণা, ভয়, দুশ্চিন্তা - এগুলাে রােগ হলেও জীবাণুঘটিত রােগ নয়৷ 

আরো পড়ুনঃ- অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করার উপায়

এই রােগগুলাের প্রকোপ দিনে দিনে পৃথিবীর সর্বত্র ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে৷ হতাশা আর দুশ্চিন্তা রােগের বাড়াবাড়ি দেখে স্বীকার না করে উপায় নেই যে, এই রােগ দু'টো সারা পৃথিবীতে মহামারীর আকার নিয়ে বিরাজ করছে৷ অথচ এই মহামারীকে প্রতিরােধ করার মতাে কার্যকর কোন অস্ত্র সভ্য দুনিয়ার মানুষের হাতে নেই৷ 

মানুষ কেন পাগল হয় এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কারাে পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়, কিন্তু নানা পরীক্ষার পর এতটুকু অত জানা গেছে যে, আরাে অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ হল ভীতি এবং দুশ্চিন্তা, ভয় এবং দুশ্চিন্তা থেকে মানুষ পাগল হয়ে যেতে পারে৷ হার্টের অসুখ, পেটের আলসার, ব্লাড প্রেসার এই তিনটি মারাত্মক রােগ আপনার হতে পারে, যদি আপনি দুশ্চিন্তায় আর ভীতিতে ভােগেন৷ 

এছাড়াও দুশ্চিন্তার কারণে বাত রােগ হতে পারে আপনার, ফুলে যেতে পারে আপনার শরীরের গ্রন্থিগুলাে৷ গেটে বাত যার হয়েছে সেই জানে, কি রকম কষ্টদায়ক রােগ এটা৷ গেটে বাত কেন হয় তা আপনি জানেন? কর্ণেল ইউনিভারসিটির মেডিক্যাল স্কুলের একজন বিখ্যাত ডাক্তার গেটে বাতের কারণ নির্ণয় করেছেন৷ তিনি বলেছেনঃ গেটে বাত হওয়ার অনেকগুলাে কারণের মধ্যে প্রধান চারটে কারণ হল 

১। বিবাহ বিচ্ছেদ; যার ফলে মন ভেঙ্গে যায়, দুশ্চিন্তা জাগে 

২। আর্থিক অনটন; যার ফলে হতাশা দেখা দেয় 

৩। একাকী নিঃসঙ্গ থাকা; যার ফলে আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঢােকে 

৪। পুষে রাখা রাগ অসন্তোষ, যার ফলে ক্ষত - বিক্ষত হয় মন৷ 

গেটে বাত আরাে নানা করণে হতে পারে, কিন্তু উপরােক্ত চারটি কারণই প্রধানত দায়ী৷ এ আমার কথা নয়, বিশ্ববিখ্যাত একজন চিকিৎসকের কথা৷ যে - লােক খুব বেশি দুশ্চিন্তা করে তার দাঁত ক্ষয়ে যায়৷ ভয়, রাগ, হিংসা, ঘ্যানঘ্যানানি ইত্যাদি মানুষের শরীরের ক্যালসিয়াম নষ্ট করে দেয়, আর এরই ফলে দাঁত ক্ষয় পেতে শুরু করে৷ দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে চান? 

আরো পড়ুনঃ- ধৈর্যের অভাবের লক্ষ্মণ সমূহ

সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হল ভালমন্দের দায় - দায়িত্ব সব ছেড়ে দিন সৃষ্টিকর্তার ওপর৷ যে - যার ধর্ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তাকে ডাকুন, তাকে নিতে দিন আপনার সব সমস্যার বােঝা৷ তার উপর অর্পণ করুন সব দুশ্চিন্তা, নিজেকে ছেড়ে দিন, তুলে দিন তার হাতে৷ আর সেই সাথে গভীরভাবে ঘুমাতে শিখুন, ভালাে ভালাে গান বাজনা শুনুন, দৈনন্দিন জীবনে প্রচুর হাসুন৷ এসব যদি মেনে চলতে পারেন আপনার ধারে কাছে ঘেঁষতেও পারবে না দুশ্চিন্তা৷ 

ফলে দুরারােগগ্য ব্যাধি হবে না, স্বাস্থ্যটা থাকবে চমৎকার, আপনি উপভােগ করবেন অঢেল সুখ আর শান্তি - যার ফলে আপনার জীবন হবে সুন্দর, মধুময়৷ এর আগে বলেছি দুশ্চিন্তা করলে দাঁত ক্ষয়ে যায়৷ ক্ষয় - এর কথা যদি ধরেন দুশ্চিন্তার ফলে আরাে অনেক কিছু ক্ষয় হয়; যেমন - আপনার মুখ৷ বেশি দুশ্চিন্তা করলে আপনার মুখের সৌন্দর্য ক্ষয়ে যায়৷ আর সৌন্দর্য ক্ষয় হওয়া মানে মুখের চেহারা বিকৃত হওয়া৷ 

অর্থাৎ আপনি যত সুন্দর মুখেরই অধিকারী হােন না কেন, দুশ্চিন্তার ফলে আপনার মুখ কদাকার, কুৎসিত, অসুন্দর হয়ে ওঠবে৷ দুশ্চিন্তা করলে কি কি রােগ হয়, আপনি জানেন? এরপর কি দুশ্চিন্তায় ভােগার সাধ আছে আপনার? দুশ্চিন্তা করা বা না করা আপনার উপর নির্ভর করে৷ ইচ্ছা করলেই আপনি দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারেন৷ পারেন শরীর, মন, সুস্থ, সুন্দর রাখতে৷ 

আরো পড়ুনঃ- প্রাচীন সময়ের রোগ নিরাময় পদ্ধতি

Dale carnegie এর বই থেকে নেওয়া

কোন প্রকার প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে অবশ্যই করতে পারেন 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad