ওজন কমিয়ে সুস্থ থাকা বর্তমান সময়ে আমাদের একটা প্রধান সমস্যা৷ আর এই সমস্যাটা আরো বড় হয়ে দাড়িয়েছে আমাদের Nutrition এর ব্যাপারে জ্ঞান কম থাকার কারনে৷ ওজন বেড়ে গেলে সবার আগে আমরা এটা বের করি যে কিভাবে ওজন কমানো যায় কিন্তু খুব কম লোক আছে যারা আগে এইটা দেখে যে ওজন বাড়ার কারন কী৷ রোগের আসল কারন না জেনেই যদি আমরা রোগ সারাতে ব্যাস্ত হয়ে যাই তাহলে সেটা কোন কাজেই আসবে না৷ এখানে আজকে বলবো যে ওজন বাড়ার কারনগুলা কী কী এবং মেডিক্যাল সাইন্স অনুযায়ী কিভাবে ওজন কমাবেন সেটা নিয়ে আলোচনা করবো৷
আরো পড়ুনঃ- ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যেকোন সমস্যার সমাধান
ওজন স্বাভাবিক রাখার জন্য একটা equation রয়েছে calories in = calories out.
আমরা প্রতিদিন যে পরিমান খাবার খাই সেগুলো থেকে আমাদের শরীরে ক্যালরি সঞ্চয় হয় এবং আমরা রোজ যে সমস্ত কাজগুলো করি যেমন, হাটা চলা, বসে থাকা এমনি শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া ওই সঞ্চিত ক্যালরি খরচ করে অর্থাৎ গাড়ির যেমন তেল আর আমাদের ক্যালরি৷
এবার আমরা যদি আমাদের যতটা প্রয়োজন তার থেকে বেশি ক্যালরি খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে থাকি তাহলে সেই ক্ষেএে অতিরিক্ত ক্যালরি গুলো আমাদের শরীরে Fat হিসেবে গ্রহণ হতে থাকে আর যার ফলে আমাদের ওজন বাড়তেই থাকে৷
একিভাবে যদি আমরা কম ক্যালরি নিতে থাকি তাহলে ওজন কমতে থাকে৷ Over weight যেমন ভালো না তেমনি Under weight ভালো না৷ এতে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়৷ অর্থাৎ এক কথায় সঠিক ওজন বজায় রাখার জন্য আসল খেলাটা হলো Calories in=Calories out এইটা সমান রাখা৷
আমরা সাধারণত ভেবে থাকি মাঠে গিয়ে দৌড়ালেই আর ব্যায়াম করলেই আমাদের ওজন কমে যাবে, যেটা একদম ভুল ধারণা৷ ওজন ৯০% নির্ভর করে আপনি রোজ কী খাচ্ছেন তার উপর আর মাএ ১০% নির্ভর করে আপনি রোজ কী কী করছেন তার উপর৷
এবার চলুন কিছু টিপস নিয়ে কথা বলি যেগুলো অনুসরণ করলে খুব সহজেই Calories equation সঠিক রাখা যায়৷
আরো পড়ুনঃ- আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতের মুঠোয়
1:- Eat slowly
ক্যালরি সঞ্চয় বেশি হওয়ার মূল কারন হলো বেশি খাওয়া৷ আর বেশি খাওয়ার মূল কারন হলো তাড়াতাড়ি খাওয়া৷ পেট যে ভরে গেছে সেই সিগন্যালটা পেট থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে সময় লাগে আমাদের খাওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে ২০ মিমিট পর৷
কিন্তু আমরা বেশিরভাগ সময় ৫ মিনিটের মধ্যেই আমাদের প্লেটের সব খাবার শেষ করে ফেলি৷ যার ফলে বেশি খাওয়া হয়ে যায়, হয়তো আমরা তখন সেটা টের পাই না এবং অজান্তেই প্রয়োজনের থেকে বেশি ক্যালরি সঞ্চয় করে ফেলি৷
এছাড়াও ধীরে খাওয়ার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে৷
2:- Use smaller plates
The journal of the association consumer এর রিসার্চ থেকে জানা গেছে, প্লেটের ব্যাস ৩০% কমানো হলে খাওয়া টাও ৩০% কমে যায়৷ তবে এক্ষেত্রে দুটি সর্ত আছে
১ঃ- নিজের খাবার নিজে serve করতে হবে৷
২ঃ- কতটা খাচ্ছি সেটা যে অন্যকেউ মনিটর করছে বা আমি নিজে মনিটর করবো এটা মাথায় রেখে খেলে চলবে না৷
খুবই সহজ একটা পদ্ধতি৷ এটা ব্যবহার করে আমরা আমাদের নিজের অজান্তেই ৩০% কম ক্যালরি সঞ্চয় করতে পারি৷ আর এটা যে কত কার্যকরি সেটা আপনি নিজেই নেটে সার্চ করে দেখতে পারেন৷
3:- Cardio in empty stomach
অনেকেই ওজন কমানোর জন্য সবথেকে ভাল ব্যায়াম খুজে থাকেন৷ যদিও ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম মাএ ১০% নির্ভর করে৷ তারপরও যদি আপনি জানতে চান Fat কমানোর জন্য সবথেকে ভাল ব্যায়াম কোনটা তাহলে সেটা হলো সকালে খালি পেটে Cardio exercise করা৷
Cardio exercise সেগুলোকে বলা হয় যেগুলো আমাদের Heart rate বাড়িয়ে তোলে যেমন, Running, swimming, skipping and having sex. যদি আপনি বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে শেষের টা আর যদি বিবাহিত না হয়ে থাকেন তাহলে শেষের টা বাদ দিয়ে যেকোন একটা বেছে নিতে পারেন৷
আরো পড়ুনঃ- ত্বকের যত্নে হলুদের উপকারিতা
এবার প্রশ্ন টা হলো Fat lose এর ক্ষেএে Cardio best কেন? রাতে ৬-৭ ঘন্টা ঘুমিয়ে, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর যখন পেট সম্পুর্ন খালি সেই সময় যদি আপনি কোন Cardio exercise শুরু করেন তাহলে আপনার বডির প্রচুর পরিমান এনার্জির দরকার পরে, আর যেহেতু পেট খালি তাই টার্গেট হয় আগে থেকে জমিয়ে রাখা চর্বি৷
এই সময় চর্বি ভেঙে শরীরের প্রয়োজনীয় এনার্জি সরবরাহ করা হয় যার ফলে সরাসরি Fat lose হতে থাকে৷ তাই খালি পেটে অন্য ব্যায়ামের থেকে খালি পেটে Cardio exercise করা৷
4:- Say no to water between meals
আমাদের অন্যতম একটা ক্ষতিকর অভ্যাস খাবার সময় খেতে খেতে পানি পান করা৷ খাবার হজম হওয়ার জন্য আমাদের পাকস্থলীর ভিতরে যে পাচকরস গুলো ক্ষরিত হয়, খাওয়ার সময় পানি পান করার ফলে পানি সেই পাচকরস গুলোর সাথে মিশে গিয়ে সেগুলোর ঘনত্ব কমিয়ে দেয় যার ফলে খাবার ঠিক করে হজম না হয়েই শরীরে শোষিত হয়ে যায়৷
এর ফলে রক্তে ইনসুলিন এর পরিমান বাড়িয়ে তোলে এবং যতবেশি ইনসুলিন ততো বেশি চর্বি৷ আর এই জিনিসটা শরীরে Fat storing এর হার বাড়িয়ে দেয় এবং তার সাথে সাথে বিভিন্ন রোগ ব্যাধিকেও শরীরে আমন্ত্রণ জানায়৷
রিসার্চরা বলেন খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এবং খাওয়ার ১ ঘন্টা পর প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করতে৷ খেতে খেতে যাতে আমাদের পানি তৃষ্ণা না পায় সেজন্য খাবারে খুব কম পরিমাণে লবন এবং চিনি ব্যবহার করতে হবে৷ লবন এবং চিনি ওজন বাড়ানোর প্রধান দুইটা উৎস৷
আরো পড়ুনঃ- সুস্থ থাকার সহজ উপায়
5:- Never stay hungry
আগের পদ্ধতি গুলো শুনে হয়তো অনেকেরই এই ভুল ধারণা টা হতে যে খুবই কম খেতে বলছি৷ হ্যা এটা ঠিক যে কম খেতে বলা হচ্ছে কিন্তু পেটে ক্ষুদা রেখে কম খেতে বলা হচ্ছে না যে কারনে Slow eating এর কথা বলা হয়েছে৷ মূল উদ্দেশ্য কম খাওয়া না, মূল উদ্দেশ্য বেশি না খাওয়া৷ আর বেশি খাওয়ার ইচ্ছে তখনি খুব কম থাকে যখন আমরা ক্ষুধার্ত না থাকি৷
যখন আমরা ক্ষুধার্ত থাকি তখন আমরা Emotional eating করতে শুরু করি যার ফলে আমরা অনেকটা খাবার খেয়ে ফেলি৷ সেই সময় এই Slow eating, use smaller plates এইসব কিছুই মাথায় থাকে না৷ সব মাথা থেকে বেরিয়ে যায়৷
এই কারনে কখনো ক্ষুধার্ত থাকা কখনো উচিত না৷ ডাক্তার রা পরামর্শ দেন প্রতি ৩ ঘন্টায় কিছু না কিছু খেতে৷ যাতে আপনি দিনভর ক্ষুধার্ত না অনুভব করেন তারজন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ Breakfast টা সবথেকে ভাল এবং স্বাস্থ্যকর করতে হবে৷
যতদিন যাবে Lunch এ Breakfast এর থেকে কম এবং Dinner এ একেবারেই কম খেতে হবে৷ আর এর ফাকে ফাকে প্রতি ৩ ঘন্টায় কিছু না কিছু খেতে হবে৷
প্রেটিন জাতীয় খাবার সবথেকে বেশি যেমন, মাংস, ডিম, দুধ এবং শকর্রা এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার যেমন, ভাত, মিষ্টি অল্প পরিমানে খেতে হবে৷ কারন সুস্থ থাকার জন্য শরীরে শুধু ফ্যাট কমালেই চলবে না তার সাথে সাথে আমাদের দরকার Musule percentage টাকেও বাড়ানো আর সেটা বাড়বে প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে৷
সবশেষে একবার মূল কথাগুলো জেনে নেই,
১ঃ- ওজন সঠিক বজায় রাখার জন্য শরীরে Calories in, calories out এর সঙ্গে সমান রাখার চেষ্টা করুন৷
২ঃ- সবসময় ধীরে খাওয়ার অভ্যাস করুন৷
৩ঃ- খাওয়ার জন্য ছোট প্লেট ব্যবহার করুন৷
৪ঃ- সকালে খালি পেটে যেকোনো Cardio exercise করুন৷
৫ঃ- খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে অথবা ১ ঘন্টা পরে পানি পান করার অভ্যাস করুন৷
৬ঃ- প্রতি ৩ ঘন্টায় কিছু অন্তত মুখে দেওয়ার চেষ্টা করুন৷
আরো পড়ুনঃ- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো উপায়
Khub shundor post
ReplyDeleteThanks to comment Jibon Somossa official blog. Stay with us for more content. Follow us to Facebook. www.facebook.com/jibonsomossa.blog