আপনি সুষম খাদ্য খেয়ে থাকেন - এরূপ ধারণার উপর নির্ভর করেই অ্যাকিউপ্রেশার চিকিৎসা প্রয়ােগ করা হয়৷ সুষম খাদ্য বলতে বােঝায় প্রােটিন, কার্বোহাইড্রেট, স্নেহ - পদার্থ, সবুজ শাকসবজি ও ঋতু অনুযায়ী টাটকা ফল সঠিক পরিমাণে খাওয়া৷ এগুলির মধ্যে কোন একটির অভাবে যদি শরীরে কোন রােগ হয় তাহলে সেই খাদ্যের অভাব পূরণ না করে রােগ সারানাে সম্ভব নয়৷
ভারতীয়দের সাধারণ খাদ্যতালিকায় রুটি বা চাপাটি, শাকসজি, তর্ভুল জাতীয় খাদ্য, ভাত, দুধ, দই বা ঘােল এবং ঋতু অনুযায়ী ফল মােটামুটি সুষম খাদ্যর মধ্যে পড়ে বলা চলে৷ একই ভাবে ইওরােপ ও আমেরিকার মানুষের খাদ্যও সুষম৷ তবে ময়দা, কফি ( যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে ) ও চিনি একটু কম খাওয়া উচিত৷ শরীবের সমস্ত অঙ্গ বা যন্ত্রগুলি অ্যাকিউপ্রেশার চিকিৎসার সাহায্যে সক্রিয় রাখা যায়৷
আরো পড়ুনঃ- ত্বকের বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার
পাকস্থলী ( Stomach ) এবং ফুসফুস ( Lungs ) ছাড়া শরীরের আর সমস্ত অঙ্গই অক্সিজেন পেলে এবং রক্ত সরবরাহ ঠিক থাকলে নিজে নিজেই কাজ করে৷ সেইজন্যেই আমাদের দেহে ফুসফুস ( শ্বাস প্রক্রিয়া ) ও পাকস্থলীর ( হজম প্রণালী ) খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে৷ এই দুটি অঙ্গের মধ্যে দিয়েই আমাদের শরীরে রােগ প্রবেশ করে৷
শ্বাস - প্রশ্বাস প্রক্রিয়া
ফুসফুস: শিশুকাল থেকেই ঠিকমত নিঃশ্বাস - প্রশ্বাস ও ফুসফুসের প্রসারের দিকে যত্ন নেওয়া উচিত৷ খেলাধুলা, দৌড়, হাসা এবং এমনকি কান্নাও ফুসফুস্ত্রে প্রসারে সহায়তা করে৷ শিশুকাল ( ৫/৬ বছর ) থেকেই উপযুক্ত অকৃসিজেন সরবরাহ ( Oxygenation ) ও রক্ত শােধন করার জন্য প্রাণায়াম শিক্ষা করা উচিত৷
প্রাণায়াম - সহজ উপায়: সােজা হয়ে বসে অথবা শুয়ে শ্বাস নিন এইভাবে গুনে গুনে ১-২-৩-৪ ...
তারপর ফুসফুসে শ্বাস আটকে গুনুন ১-২-৩- ৪ ...
তারপর শ্বাস ছাড়ন গুনে গুনে ১-২-৩-৪ ... তারপর থামুন৷
শ্বাস না নিয়ে শুনুন ১-২-৩- ৪ ...
এটি অন্তত ১০ থেকে ১৫ বার অভ্যাস করুন৷ এই রকমের প্রাণায়াম দিনে ৪ থেকে ১০ বার করুন এবং অভ্যাসের মাধ্যমে বাড়িয়ে ১০ অবধি করুন৷ এই বিরামের সময়ে ফুসফুস বিশ্রাম পায় এবং পুনরুজ্জীবিত হয়৷ এই রকমের নিয়ন্ত্রিত শ্বাসক্রিয়া, যাকে প্রাণায়াম বলা হয়, শিকাগাের একটি হাসপাতাল যক্ষা রােগীদের ওপর প্রয়ােগ করে অবিশ্বাস্য ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল৷
প্রাণায়াম: একবার ১০ অবধি গােনায় পৌঁছে গেলে আপনি এইভাবে প্রাণায়াম করতে পারেন: শ্বাস নিন ও গুনতে থাকুন ১০ ( অবধি )
শ্বাস ধরে রেখে গুনতে থাকুন ২০ ( অবধি )
শ্বাস ছাড়ুন ও গুনতে থাকুন ১০ ( অবধি )
শ্বাস নেওয়া বন্ধ রেখে গুনতে থাকুন ১০ ( অবধি )
এই অনুপাতে ১ : ২ : ১ : ১
প্রাণায়াম মুদ্রার দ্বারা পঞ্চভূতকে নিয়ন্ত্রণ করা: প্রাণায়াম করার সময়ে দেহের পঞ্চভূতকেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, কারণ হাতের বিভিন্ন আঙুল সেগুলির প্রতীক:
বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ - অগ্নি বা সূর্য
তর্জনী - বায়ু বা বাতাস
মধ্যমা - মহাকাশ
অনামিকা - পৃথিবী কনিষ্ঠা জল
আরো পড়ুনঃ- সুস্থ থাকার সহজ উপায়
এই আঙুল - মুদ্রার বিভিন্ন সমম্বয়ে আমরা শুধু এই পঞ্চভূতকে নিয়ন্ত্রণই করতে পারি না, অনেক রােগও সারাতে পারি৷ এটি যে কোনও অবস্থাতেই করা যেতে পারে, কিন্তু পদ্মাসন বা সুখাসনে বসে আরও ভালাে ফল পাওয়া সম্ভব৷ শুরুতে ১০ মিনিট ধরে করে তারপর অন্তত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ধরে অভ্যাস করা যায়৷ কিছু মুদ্রা নিচে দেখানাে হয়েছে৷ এগুলি দুই হাতে একসাথে করতে হবে৷
১. ধ্যান মুদ্রা: তর্জনীর দ্বারা শুধু বৃদ্ধাংগুষ্ঠে স্পর্শ করুন - চাপ দেওয়ার দরকার নেই৷
লাভ: এই মুদ্রার দ্বারা মস্তিষ্কের ক্ষমতা, একাগ্রতা, স্মৃতিশক্তি ইত্যাদি বৃদ্ধি পায় এবং অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, একাগ্রতার অভাব ইত্যাদি দূর করা যায়৷
আরো পড়ুনঃ- স্বাস্থ্যের রহস্য | কোন কিছুই নিরাময় অসম্ভব নয়
২. বায়ু মুদ্রা ( বাতাস ): তর্জনীকে বৃদ্ধাঙ্গষ্ঠের গােড়ায় মাউন্ট অফ ভেনাসে রেখে বৃদ্ধাঙ্গষ্ঠে দ্বারা, চিত্রে যে দেখানাে হয়েছে, চাপ দিতে হবে৷
লাভ: এতে সন্ধিবাত, গেটে বাত, বাতরোগ, পার্কিনসন্স রােগ ও রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা দূর হয়৷ ভালাে ফলের জন্য প্রাণমুদ্রাও করতে হবে৷
৩. শূণ্যমুদ্রা ( আকাশ ): চিত্র অনুসারে মধ্যমা মাউন্টঅফনােসে রাখুন এবং বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে তাতে চাপ দিন৷
লাভ; এতে কানের ব্যথা, বধিরতা, মাথা ঘােরা ইত্যাদি নিরাময়ে সাহায্য করে৷ ভালাে ফল পেতে হলে এই মুদ্রাটি ৪০ থেকে ৫০ মিনিট ধরে অভ্যাস করা দরকার৷
৪. পৃথিবী মুদ্রা: ৬১ নং চিত্রে যেমন দেখানাে হয়েছে, অনামিকা ও বৃদ্ধাগুষ্ঠ একসাথে রাখুন
লাভ: এটি দেহ ও মনের দুর্বলতা সারায়৷ এটি প্রাণশক্তি ( চেতনা ) বাড়ায় ও অসুস্থ ব্যক্তিকে নতুন শক্তি দেয়৷ এটি মানসিক শান্তিও দেয়৷
আরো পড়ুনঃ- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়
৫. বরুণ মুদ্রা ( জল ): চিত্র ৬২ তে যেমন দেখানাে হয়েছে, বৃদ্ধাগুষ্ঠ ও কনিষ্ঠার আগাগুলি একত্রে রাখুন৷
লাভ: এটি রক্তের অশুদ্ধতা, ত্বকের সমস্যা সারায় ও ত্বককে মসৃণ করে তােলে৷ এটি আন্ত্রিক ও নিরুদনকারী যে কোনও অন্য রােগে কার্যকর হয়৷
৬. সূর্য মুদ্রা: অনামিকাকে মুড়ে তার বাইরের দিকের দ্বিতীয় ভাজে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে চাপ দিন, চিত্র ৬৩ অনুসারে৷
লাভ: এটি দেহে তাপ সৃষ্টি করে, হজম করাতে ও দেহের চর্বি কমাতে সাহায্য করে৷
৭. প্রাণ মুদ্রা ( জীবন শক্তি ): কনিষ্ঠা ও অনামিকা এমনভাবে মুড়ে নিন যাতে তাদের আগা বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের আগাকে স্পর্শ করে, যেমন চিত্র ৬৪ তে দেখানাে হয়েছে৷
লাভ: এটি জীবনশক্তি বাড়ায় এবং মানসিক দুর্বলতা ও অবসাদ দূর করে, এটি চোখের দৃষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে এবং চশমার নম্বর কমাতে সহায় হয়৷
৮. লিঙ্গ ( শিব ) মুদ্রা: দুই হাতের তালু জুড়ে নিয়ে আঙুল গুলিকে পরস্পরের খাজে ঢুকিয়ে দিন৷ বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ খাড়া করে রেখে ডান হাতের তর্জনী ও বৃদ্ধঙ্গুষ্ঠ দ্বারা জড়িয়ে নিন, যেমন চিত্র ৬৫ তে দেখানাে হয়েছে৷
লাভ: সর্দি ও ফুসফুসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে এটি দেহের প্রতিরােধশক্তি বাড়ায় এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের প্রভাব ও সর্দিজ্বর থেকে রক্ষা করে৷ এটি ফুসফুসে শক্তি জোগায়, দেহে তাপ সৃষ্টি করে এবং জমে থাকা শ্লেষ্ম এমন কী চর্বিও জ্বালিয়ে দেয়৷ এই মুদ্রা অভ্যাস করার সময় প্রচুর পরিমাণে কাচা সবজির রস, ফলের রস ও জল পান করতে হবে, দিনে অন্তত ৮ গ্লাস৷ এই মুদ্রাগুলির সাথে সাথে প্রাণায়াম করলে আরও ভালাে ফলাফল পাবেন৷
আরো পড়ুনঃ- বদহজম দূর করার উপায়
শ্বাস ধারণ করা: প্রাণায়াম করার সময়, শ্বাস গ্রহণ করার পর আপনার তর্জনী দ্বারা বৃদ্ধঙ্গুষ্ঠের উপরের অংশে ১ নম্বরে চাপ দিন৷ এরকম করলে ফুসফুসে সহজেই শ্বাস ধরে রাখতে পারবেন৷ এরপর, বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের মধ্যখানে ২ নম্বরে চাপ দিলে, ধারণ ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়৷ চিত্র ৫৮ দেখে নিন৷ বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের গােড়ায় ৩নং রেখায় চাপ দিলে ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ হয়ে দাঁড়ায়৷
দীর্ঘায়ু হওয়ার উপায়: যদি ফুসফুসে বাতাস বেশি পরিমাণে ধরে রাখা যায়, তার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার হয়ে রক্তে ও দেহে বেশি শক্তি জোগায়৷ তার মানে এও দাঁড়ায় যে শ্বাসের সংখ্যাও কম হয়৷ ভারতীয় দর্শনশাস্ত্র অনুসারে আমাদের আয়ুর দৈর্ঘ্য নির্দিষ্ট থাকে এবং তার পরিমাপ মিনিট, দিন মাস ও বছরে না হয়ে শ্বাসের মােট সংখ্যায় হয়ে থাকে৷ প্রাণায়াম অভ্যাস করে এবং ফুসফুসে দীর্ঘ সময় শ্বাস ধরে রেখে আমরা দৈনন্দিন শ্বাসের মােট সংখ্যা কমাতে পারি৷ এটি আমাদের দীর্ঘজীবন লাভে সাহায্য করবে৷
প্রথম প্রক্রিয়া ( সূর্যপ্রাণায়াম ): শরীরের তাপ বৃদ্ধি করার জন্য বাম নাসারন্ধ্র বন্ধ করুন দক্ষিণ নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস নিন এবং এক থেকে চার পর্যন্ত গুনে ছাড়ুন৷ যেমন আগে বলা হয়েছে দক্ষিণ নাসারন্ধ্র সূর্যের সঙ্গে যুক্ত ( যােগশাস্ত্রে যাকে বলা হয় পিঙ্গলা ) বলে এই নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস - প্রশ্বাস চলাচল করলে শরীরে তাপ সৃষ্টি হবে৷ এই প্রক্রিয়া শীতকালে, বর্ষাকালে এবং ঠাণ্ডালাগা, হাঁপনী, পােলিও, পক্ষাঘাত, ব্রংকাইটিস, আরথ্রাইটিস, যক্ষ্মা, প্রভৃতি রােগের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য, কারণ তখন শরীরে তাপের প্রয়ােজন৷ এটি দশবার আরও বেশি করুন৷
দ্বিতীয় প্রক্রিয়া ( চন্দ্র প্রাণায়াম ): শরীরে শীতলতা বৃদ্ধি করার জন্য দক্ষিণ নাসারন্ধ্র বন্ধ করুন, বাক সার দিয়ে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন এবং উপরের নির্দেশ অনুযায়ী গুনতে থাকুন৷ বাম নাসারন্ধ্র চন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ( যােগ শাস্ত্রে যাকে বলা হয় ইড়া ) বলে শরীরে শীতলতার সৃষ্টি করে, এই প্রক্রিয়া জ্বর হলে এবং গরমকালে সর্দিগমি প্রভৃতি রােগের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য৷ এটি দশবার বা আরও বেশি করুন৷
কোন প্রকার প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে অবশ্যই করতে পারেন
Thanks to comment Jibon Somossa official blog. Stay with us for more content. Follow us to Facebook. www.facebook.com/jibonsomossa.blog