আত্মহত্যা! যে মেয়েটি গােলাপের পাপড়ি ছেড়া নিয়ে প্রিয়তম মানুষটির সাথে অভিমান করে, সে কী করে নিজের জীবনকেই জীবন থেকে ছিড়ে ফেলে; কেন সে আত্মহত্যা করে?
যে যুবকটি তার প্রেয়সীর হাতের আঙ্গুল কাটার রক্ত দেখে চোখের জলে পাঁপড়ি ভেজায়; গভীর রাতে মুঠোফোনে যে যুবকটি হাতে মেহেদী রাঙানাের স্বপ্ন দেখায়; কেন সে একদিন নিজের পুরাে শরীরই রক্তে রাঙিয়ে দেয়, কেন সে আত্মহত্যা করে?
আরো পড়ুনঃ- আমরা কেন ঘুমাই
যে ছেলেটি আত্মহত্যা করেছিল, সে আসলে বাঁচতে চেয়েছিল৷ বাঁচার জন্যই আত্মহত্যা; মরার জন্য নয়৷ নিঃশ্বাসের আড়ালে বেঁচে থাকার নাম যদি জীবন হয়, তবে দীর্ঘায়ু অভিশাপ৷
যে ছেলেটি কথা দিয়েছিল চাকরিটা পেলেই প্রেয়সীকে ঘরে তুলবে; আজ তার চাকরির বয়স শেষ৷ কোটা প্রথার দৌরাত্ম আর ঘুষের টাকার অভাবে তার চাকরিটা জুটল না৷ তার প্রেয়সীর রাঙা মেহেদি আজ ছুঁয়ে আছে অন্য কারাে হাত৷ বেকারত্ব আর প্রেম হারানাে যন্ত্রণা নিয়ে ছেলেটি আজ মরতে চায়৷ কী বলে সান্ত্বনা দিবে আজ তুমি তাকে?
আমি বিশ্বাস করি- সে আসলে মরতে চাইনি, চেয়েছিল প্রেয়সীর সাথে পড়ন্ত বিকেলে ফুসকা খাওয়ার দৃশ্যটি ভুলতে৷ সে চেয়েছিল বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায়, কদমফুল হাতে আসতে দেরি করার অভিযােগে প্রেমিকার অভিমান করা মুখটি সুতি থেকে মুছে দিতে৷ কারণ তার প্রেয়সী আজ অন্য কারাে৷ কিন্তু স্মৃতি ভুলার সহজ উপায় হিসেবে সে মৃত্যুকে বেছে নিল৷
যে মেয়েটি স্বপ্ন বুনেছিল একটি সুন্দর সংসারের৷ কোনাে এক প্রতারক তার প্রেমের নামে ছলনার আগনে মেয়েটির গর্ভে সন্তান এনেই পালিয়ে গেল৷ মেয়েটি লজ্জায় আজ মরতে চায়৷ সে আসলে মরতে চাইনি, চেয়েছিল এই কলঙ্কটি থেকে মুক্তি পেতে৷ কিন্তু এমন কলঙ্কে তার পাশে কাউকে না পেয়ে সে আজ নিজেকেই মুক্ত করে দিল পৃথিবী থেকে৷ যে সন্তানটি মায়ের গর্ভেই মারা গেল ভ্রন অবস্থায়, তুমি কি পরিচয়ে বাঁচাবে তাকে৷ জন্মানাের আগেই যে জীবন মৃত হয়, তার কলঙ্কের ভার কার?
যে মেয়েটি মুখ ঝলসে গেল এসিডের দহনে; যে ছেলেটির চাকরি হয় না ঘুষের কারণে, যে মেয়েটি বিশ্বাস করে কলঙ্কিত হয়েছে কিংবা যে মেয়েটি ধর্ষিত হয়েছে; যে ছেলেটি ব্যর্থ প্রেমে মাদকসেবন করে; কী বলে তাদের তুমি মৃত্যু থেকে বাঁচাবে?
আরো পড়ুনঃ- মানুষ কেন বিভিন্ন রকমের হয়
এরা কেউই তাে মরতে চাইনি, আজ তারা শুধু বেঁচে থাকার কারণটিই হারিয়ে ফেলেছে৷ আমরা তাদের বেঁচে থাকার কারণ না দেখিয়ে এড়িয়ে চলেছি বলেই আজ তারা মৃত৷ এরা সবাই তাে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখেছিল৷ জীবন সাজাতে যখন এক প্রান্তের মানুষ ব্যস্ত, অন্য প্রান্তে কেন মানুষ জীবনের বােঝা বইতে না পেরে আত্মহত্যা করবে?
চলুন জীবনে জীবন আনি৷ এ জীবন কোনাে ঘটনার কাছে হেরে যাবার জন্য জন্মায়নি; এ পৃথিবীটাও নয় কোনাে ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন৷ আমি বিশ্বাস করি, এ জীবন বিধাতার শ্রেষ্ঠ উপহার! একে সাজাতে হয়, বাঁচাতে হয়, স্বপ্ন দেখাতে হয়৷ বিধাতার শ্রেষ্ঠ উপহারকে হত্যা করার কোনাে অধিকার তােমার নেই৷ যে তুমি নতুন কোনাে জীবনের সৃষ্টি করতে পারাে না, সে তুমি কেন বিধাতার সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ জীবনকে হত্যা করতে চাও!
আসুন বাঁচতে শিখি, বাঁচতে শিখাই৷ ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বরং চলুন ঘটনাকেই প্রভাবিত করি৷ যে হতাশা, ব্যর্থতা বা বাঁচার কারণ খুঁজে না পাওয়া মানুষগুলাে আত্মহত্যা করে; সে একই কারণে আত্মহত্যা না করে আপনি যদি বেঁচে থেকে নতুন জীবন সাজাতে পারেন, তবেই আপনিই হবেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্পী; আপনার জীবনটাই হবে শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম৷
আরো পড়ুনঃ- কী কারনে মানুষ পাগল হয়
কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে করতে পারেন এখানে অথবা আমাদের ফেসবুক পেইজে৷
Related
যেকোনো কাজে ভদ্রভাবে না বলার ৫টি উপায়
Thanks to comment Jibon Somossa official blog. Stay with us for more content. Follow us to Facebook. www.facebook.com/jibonsomossa.blog