hh

অবচেতন মনের সাহায্যে ভয় দূর করবেন যেভাবে

অবচেতন মনের সাহায্যে ভয় দূর করবেন যেভাবে

Joseph Murphy এর লেখা International Best Selling বই The Power of your subconscious mind থেকে শেয়ার করবো "অবচেতন মনের সাহায্যে ভয় দূর করবেন যেভাবে"

আমার এক ছাত্র তার প্রফেশনাল অ্যাসােসিয়েশনের বার্ষিক ব্যাংকোয়েটে আমন্ত্রিত হয়েছিল বক্তৃতা দেয়ার জন্য৷ সে আমাকে বলেছে হাজার হাজার মানুষ, যাদের বেশিরভাগ তার কর্মক্ষেত্রে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত, এদের সামনে বক্তৃতা করার কথা ভাবলেই তার বুক ধড়ফড় করে৷ তবে এ ভয়কে কিন্তু সে জয় করেছিল৷ বহু রাত সে একটি আর্মচেয়ারে পাঁচ মিনিটের জন্য চুপচাপ বসে ধীরে ধীরে নিজেকে বলেছে আমি এ ভয় জয় করব৷ আমি এ মুহূর্তে এটি জয় করছি৷ আমি ভারসাম্য এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলছি৷
 আমি রিল্যাক্সড এবং শান্ত৷ এভাবে সে ভয়কে জয় করে অত্যন্ত সফল একটি বক্তৃতা দিয়েছিল৷ অবচেতন মন সাজেশন শােনে৷ এটি সাজেশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় আপনি যখন আপনার মনকে স্থির এবং রিল্যাক্স করেন, সচেতন মনের চিন্তাভাবনাগুলাে অবচেতন মনে ঢুকে যায়৷ 


মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু 
ভয়কে বলা হয় মানুষের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা, অসুস্থতা, মানুষের সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের পেছনে দায়ী ভয়৷ লাখ লাখ মানুষ অতীত এবং ভবিষ্যত নিয়ে ভীত, তারা ভয় পায় বৃদ্ধ বয়সকে, মস্তিষ্ক বিকৃতি এবং মৃত্যুকে৷ কিন্তু ভয় হলাে মনের একটি ভাবনা৷ 

এর মানে আপনি নিজেই নিজের ভাবনাকে ভয় পাচ্ছেন৷ একটি ছােট শিশু ভয়ে প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারে যদি তার খেলার সাথী বলে যে তার বিছানার নিচে একটি দানব লুকিয়ে আছে৷ রাতের বেলা খপ করে তাকে জাপটে ধরবে৷ কিন্তু তার বাবা - মা যখন ঘরের বাতি জ্বালায় এবং বাচ্চাটি দেখে কোনাে দানব নেই তখন তার মন থেকে দূর হয়ে যায় ভয়৷ 

বাচ্চাটি ভয় পাচ্ছিল কারণ সে বিশ্বাস করছিল সত্যি তার খাটের তলায় দানব আছে৷ কিন্তু আলাে জ্বালাবার পরে ভয়ের এ বিশ্বাস তার মন থেকে দূর হয়ে যায়৷ সে দেখে দানবের কোনাে বাস্তব অস্তিত্ব নেই৷ একইভাবে আপনার বেশিরভাগ ভয়ই কিন্তু অস্তিত্বহীন৷ ছায়া থেকে ভয়ের উৎপত্তি আর বাস্তবে ছায়ার কোনাে অস্তিত্ব নেই৷ 


যে জিনিসে ভয় পাচ্ছেন ওটাই করুন 
উনিশ শতকের বিখ্যাত দার্শনিক এবং কবি র্যালফ ওয়াল্ডাে এমারসন বলেছেন, ‘আপনি যে জিনিসটি নিয়ে ভয় পাচ্ছেন বা যে কাজ করতে ভীত, ওটাই করুন৷ আপনি যদি প্রত্যয়ী হন যে সত্যি মন থেকে জয় করবেন ভয়, আপনার সচেতন মনকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিন৷ অবচেতন মনের শক্তি আপনার চিন্তার প্রকৃতি অনুযায়ী প্রবাহিত হবে৷ 


মঞ্চভীতি দূর
জ্যানেট আর. নামে এক তরুণী অপেরা গায়িকার ক্যারিয়ার প্রায় নষ্ট হতে যাচ্ছিল মঞ্চ ভীতির কারণে৷ এ গল্প আপনারা আগেই গুনেছেন হয়তো৷ তাকে যখন একটি অপেরা প্রডাকশনে একটি প্রধান চরিত্রে কাজ করার জন্য অডিশন দিতে ডাকা হলাে, সে বুঝতে পারল সফল হওয়ার এটাই তার শেষ সুযােগ৷ 


যদিও তার মনে তখনও প্রবলভাবে মঞ্চভীতি কাজ করছিল৷ জ্যানেট জানত এ ভয় দূর করতে না পারলে সে আবার ব্যর্থ হবে৷ সে ভয়কে জয় করল যেভাবে তা হলাে সে একটি ঘরে একাকী ঢুকে নিজের শরীর এবং মন শিথিল করে তুলল৷ অবচেতন মন থেকে ভয় দূর করার জন্য সে ধীরে ধীরে এ কথাগুলাে বলতে লাগল, ‘আমি খুব সুন্দর গান গাই, আমি ভারসাম্যপূর্ণ, শান্ত এবং আত্মবিশ্বাসী৷ 

সে প্রতি সিটিংয়ে এ কথাগুলাে পাঁচ থেকে দশবার পুনরাবৃত্তি করল৷ এক সপ্তাহ বাদে সত্যি সে হয়ে উঠল ভারসাম্যপূর্ণ এবং আত্মবিশ্বাসী৷ যখন সময় এল, সে দারুণ একটি অডিশন দিল৷ আপনিও আপনার অবস্থা অনুযায়ী এ প্রক্রিয়াটি গ্রহণ করতে পারেন৷ 


ব্যর্থতার ভয়
কাছের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায়ই আমার কাছে ছাত্ররা আসে পরীক্ষার সময় স্মৃতিভ্রংশের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে৷ এরা সবাই আমাকে একই কথা বলে, ‘পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে সমস্ত জবাব মনে পড়ে যায় আমার৷ কিন্তু ক্লাসরুমে খালি এক্সাম বুকলেটের দিকে তাকলে কিছুই মনে থাকে না৷ সব ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যায়৷ 

এ ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে আমি দেখেছি এরা সকলে ব্যর্থতার ভয়ে ভীত৷ ফলে যা হয়, অবচেতন মন তাদের ব্যর্থতার ভয়কে বাস্তবে রূপ দেয়৷ ব্যর্থতার ভয় তৈরি করে ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা, একই সঙ্গে অ্যামনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ৷ শিলা মি. নামে এক মেডিকেল স্টুডেন্ট তাদের ক্লাসের সবচেয়ে ভাল ছাত্রী ছিল৷ কিন্তু লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষার মুখােমুখি হলেই অতি সাধারণ প্রশ্নের জবাবও সে ভুলে যেত৷ আমি এর কারণ তাকে ব্যাখ্যা করলাম৷ 

সে পরীক্ষা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ধরে নিয়েছিল পাস করতে পারবে না৷ এই নেতিবাচক ভাবনাগুলােয় ভর করেছে ভয়৷ এই মনকে অনুরােধ করেছে দেখার জন্য যে সে ব্যর্থ এবং অবচেতন মন ঠিক সে কাজটিই করেছে৷ যে কারণে সে পরীক্ষার দ্দিন স্মৃতিভ্রংশের শিকার হয়েছে৷

কীভাবে সে জয় করল ভয় 
শিলা তার অবচেতন মন নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখল এটি হলাে স্মৃতিশক্তির গুদামঘর৷ সে তার মেডিকেল ট্রেনিংয়ে যা যা পড়েছে বা লেকচার শুনেছে সবকিছুর নিখুঁত রেকর্ড রয়েছে এর মধ্যে৷ সে আরও জানল অবচেতন মন সাড়া দেয় এবং পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত৷ এর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে রিল্যাক্সড এবং আত্মবিশ্বাসী ও শান্ত মনে থাকতে হবে৷ 


প্রতিদিন রাতে শিলা কল্পনা করতে শুরু করল তার বাবা মা তার দারুণ রেকর্ডে অভিনন্দন জানাচ্ছেন৷ সে হাতে একখানা কাল্পনিক চিঠিও দেখতে পেল৷ এভাবে প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা শেষে পরীক্ষা দিতে কোনাে সমস্যাই হলাে না শিলার৷ তার অবচেতন মনের মনােজগত জ্ঞান তাকে দখল করে নেয় এবং এটি চমৎকার ফলাফল দিতে তাকে বাধ্য করে৷ 

কোন প্রকার প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে অবশ্যই করতে পারেন 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad